আইন প্রয়োগে অলসতা কেন?

বেপরোয়া গতিতে চালানোয় বেড়েছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা
ফাইল ছবি: প্রথম আলো

আগামী ১৫ জুন ৭ম ধাপে ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তার ধারাবাহিকতায় শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে নির্বাচনের তফসিল ঘোষিত হয়েছে।
তফসিল ঘোষণার পর থেকে দেখা যাচ্ছে প্রার্থীরা উপজেলা সদরে অবস্থিত নির্বাচন অফিসে প্রতিনিয়ত শো-ডাউন করতে করতে আসছেন। তার বেশির ভাগই মোটরসাইকেল নিয়ে। এটা আমি স্বাভাবিকভাবেই দেখছি। কিন্তু দেখা যায়, প্রার্থীদের সাথে শো-ডাউন করতে আসা মোটরসাইকেল চালক ও আরোহীদের সাথে হেলমেটসহ কোনো ধরনের নিরাপত্তা সরঞ্জাম তো নেই, তারপর আবার উচ্চ শব্দে হর্নসহ জরুরি সিগনাল বাজিয়ে মানুষের কান ঝালাপালা করছে। এ ছাড়াও প্রাপ্ত বয়স্ক না হয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ব্যতীত চালকের বেগতিকভাবে বাইক চালানো তো আছেই।

বিষয়টি নিয়ে এক প্রার্থীর সাথে কথা বললে তিনি বলেন, এগুলো কোনো জরুরি বিষয় না। এই সময় একটু আধটু অনিয়ম হবেই। এত নিয়ম মেনে সবকিছু হয় না।
নিরাপদ সড়কের আন্দোলনরত সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত এক বড়ভাইয়ের সাথে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার এক পর্যায় তিনি বলছিলেন এই সময় সব চেনা পরিচিতরা প্রার্থী কার বিরুদ্ধে বলব। এই বিষয়ে প্রশাসনের কড়া পদক্ষেপ থাকা উচিত।
এ বিষয়ে সামনে পদক্ষেপ নেওয়ার ভাবনা আছে কিনা তা জানতে কথা বললাম উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে। জাজিরা উপজেলা নির্বাহী অফিসার কামরুল হাসান সোহেল বললেন, বিষয়টি আসলেই একটি বড় ধরনের অসঙ্গতি। এ বিষয়ে যথাযথ আইন প্রয়োগের ব্যবস্থা করব। এ ছাড়াও নির্বাচনকালীন আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে এটি। শিগগিরই যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হবে। তবে অবশ্যই সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।

আমার কথা হচ্ছে মোটরসাইকেলগুলো যখন উপজেলা সদরে আসছে তারা তো প্রধান সড়কগুলো ব্যবহার করেই আসছে। তবে কেন ট্রাফিক বিভাগ এদিকে কড়া নজর রাখছে না?

আমি মনে করি অন্তত এই নির্বাচনকালীন আইনের যথাযথ প্রয়োগ হলে বৃহৎ আকারে জনসচেতনতা তৈরি করা সম্ভব হবে।

কিছুদিন আগে রাত ৮টার দিকে মোটরসাইকেল নিয়ে ঢাকা-শরীয়তপুর মহাসড়ক দিয়ে মাঝিকান্দি ফেরিঘাটে যাচ্ছিলাম হঠাৎ দেখলাম আমার ডানপাশ দিয়ে লাইট জ্বালিয়ে একটি গাড়ি আসছে। একটু সামনে এগোতেই দেখি একটি বাস। কোনোরকম পাশ কাটিয়ে জীবনে বেঁচে গিয়েছি। পরে বাস থামিয়ে চালককে জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কেন একপাশের লাইট জ্বালিয়ে বাস চালাচ্ছেন? উত্তরে তিনি করুণভাবে ক্ষমা চাইতে থাকলেন। পরে বাসের রেজিস্ট্রেশন নম্বরসহ ছবি তুলে ওই এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক ইনচার্জ কে অবগত করলাম। বললেন ব্যবস্থা নেবেন।

এখানে আমার কথা হচ্ছে, আগে কেন এ ধরনের ত্রুটিযুক্ত গণপরিবহনগুলো শনাক্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে আইন প্রয়োগে অলসতার বশবর্তী হয়ে আছে প্রশাসন।

সর্বশেষ কর্তৃপক্ষকে বলতে চাই, সর্বদা আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করুন। সাধারণ মানুষ সচেতন হবে। বেঁচে যাবে অসংখ্য প্রাণ। আপনাদেরও পরিশ্রম কম হবে।

মো. পলাশ খান
সমাজকর্মী ও সাংবাদিক