আপনার ভালো থাকার দায়িত্ব অন্যের হাতে কেন?

পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষই অন্যকে নিয়ে ভেবে যে সময় পার করে দেয় সে সময়ের এক চতুর্থাংশ সময় যদি নিজেকে নিয়ে ভাবত, নিজেকে ভালো রাখার পথ খুঁজত তাহলে আপনার আশপাশে হয়তো এত আত্মহত্যা, জীবনের প্রতি বিতৃষ্ণা আর জীবনকে হাজারো অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হতো না। কথাটা প্রথম ভাবনাই অনেকে নিতে পারবেন না এটাই স্বাভাবিক। কারণ আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি, চিন্তা চেতনা তো সব অন্য মানুষকে ঘিরে।

কে আমার কথায় কষ্ট পেল, কে কী ভাবল, কাকে কী দিলে সে খুশি হবে, কী বললে সে একটু আনন্দ পাবে এমন চিন্তা করতেই আমাদের দিন রাতের অর্ধেক সময় পার হয়ে যায়। কিন্তু কখনও আমরা আমাদের নিজেদেরকে ভালো রাখার জন্য কিছু করা তো দূরেই থাকুক একটু ভাবনার সময়ও হয়ে উঠে না। ক্রমশ আমরা যেন এই পথটি ধরে অনেক দূর এগিয়ে চলেছি। যেখানে শুধু বাড়ছে হতাশা, দুঃখ-কষ্ট আর মানসিক যন্ত্রণা।

আর অন্যদিকে ঘাটতি পড়ছে নিজের প্রতি শ্রদ্ধাশীলতা, ভালোবাসার সেই মূল জায়গাটিতে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পারিবারিক সম্পর্কের বাইরে গিয়ে আমরা সামাজিক সম্পর্ক আর বন্ধুত্বের সম্পর্কে নিজেকে আবদ্ধ করে ফেলছি। আর তখনই আমরা পড়ছি শুভংকরের ফাঁকিতে। নিজেকে ফেলে দিচ্ছি ঠাঁই না পাওয়া অথই জলে। আর এমন সম্পর্কের স্থায়িত্বের ভাবনায় যখন ফাটল ধরছে তখনই আমরা বেঁচে নিচ্ছি জীবনের পথকে স্তব্ধ করার।

ব্যক্তি চিন্তায় নিজেকে ব্যস্ততা দেখিয়ে আমরা ঝুঁকে পড়ছি তার, তার ও তার জগৎ নিয়ে। এ ঘোর আমাদের নিজেদের ভালো থাকার অধিকারটুকু কেঁড়ে নিচ্ছে। জীবনে একটি সময় চলে আসছে সেখানে নিজের ভালো মন্দ, ভালো লাগা সবই তাকে কেন্দ্র করে চলছে। কী পরবো, কী খাব, কোথায় যাব অলিখিত এ সংবিধানও তিনিই রচনা করছেন। কিন্তু কেন? কেন আমরা দিন দিন মানসিকভাবে নিজেকে সস্তা করে তুলছি? কেন আমার ভালো থাকার দায়িত্বটা অন্যকে দিতে হবে? এসব প্রশ্নের উত্তর অনেকের কাছেই অজানা ধোঁয়াশার মতো মনে হবে। পরিস্থিতি যতই আপনার বিপরীত থাকুক নিজের ভালো থাকার দায়িত্বটা নিজেই নিয়ে নিন। অন্যকে নিয়ে না ভেবে নিজেকে সময় দিন। প্রতিদিন ভালো ভালো এমন কিছু কাজ করুন যাতে দিন শেষে নিজের মনে কিছুটা স্বস্তি অনুভব হয়। তাই জীবনকে ভালো রাখতে, উপভোগ করতে চলুন কিছু বিষয় দেখে আসি—

নিজেকে নিয়ে ভাবুন: শত ব্যস্ততার মধ্যে হলেও নিজেকে কিছুটা সময় দিন। কী কী করলে আপনি শান্তি অনুভব করেন সেটা খুঁজে বের করুন। প্রতিদিন কিছু না কিছু সে কাজগুলো করুন। দেখবেন দিন শেষে নিজের কাছেই অন্যরকম একটি ভালো লাগা কাজ করবে।
মানুষের পাশে দাঁড়ান: নিজের সাধ্যমতো আপনার পাশে থাকা অসহায় মানুষগুলোকে সাহায্য করুন। দেখবেন, কাউকে সামান্য সহযোগিতা করতে পারলেও নিজের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে। তাদের মুখের এক টুকরো হাসি আর দোয়া আপনার চলার পথকে আরও সুন্দর করে তুলবে।
পথশিশুদের সাথে সময় কাটান: আমাদের চারপাশে অসংখ্য পথশিশু রয়েছে। নিজের অবসর সময় কিংবা মন খারাপের সময়ে তাদেরকে নিয়ে গল্প করুন, আড্ডা দিন। দেখবেন পৃথিবীর সুখী মানুষগুলোর মধ্যে নিজেকেই নিয়ে আসতে পারবেন।
প্রত্যাশা কমিয়ে আনুন: কারও জন্য কিছু করলে কিংবা কাউকে ভালোবাসলে সেও আপনাকে আপনার সমপরিমাণ ভালোবাসবে, প্রাধান্য দেবে এমন ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসুন। কাউকে উপকার করলে তার প্রতিদান পাওয়ার আশা ছেড়ে দিন। কারণ প্রত্যাশার জায়গাটা যত ছোট হবে আপনি তত খুশি থাকবেন।

পরিবারকে সময় দিন: অনেকেই অনেক কথা বলবে কিন্তু জীবনের সব থেকে খারাপ সময়গুলোতে পাশে কেবল আপনার পরিবারকেই পাবেন। তাই প্রতিদিন মা-বাবা, দাদি-দাদা এবং পরিবারের বাচ্চাদের সাথে কিছুটা সময় কাটান। এতে আপনার যেমন মন ভালো থাকবে তেমনি পরিবারও খুশি হবে।
তাই জীবনে চলার পথে ঘাত-প্রতিঘাত থাকবে, দুঃখ-কষ্ট থাকবে তবুও নিজেকে ভালো রাখতে হবে। আর তার জন্য নিজেই নিজেকে সময় দিতে হবে, নিজের একাকিত্বের সঙ্গী হতে হবে।

রিয়াদ হোসেন
শিক্ষার্থী
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা