আমরা কি প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক হতে পারব না

করোনার কারণে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে শিথিলতা নেই কেন নয়?
ছবি: প্রথম আলো

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ সব শর্ত পূরণ করে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করে। কিন্তু হঠাৎ করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব স্থবির হয়ে পড়ে। আমাদের দেশের অফিস-আদালত, এমনকি সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রমও অনেকটা স্তিমিত হয়ে পড়ে। দেশের শিক্ষা কার্যক্রম, উচ্চশিক্ষার ভর্তি কার্যক্রম, বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষাসহ অন্য অনেক প্রয়োজনীয় বিষয় করোনাভাইরাসের কারণে স্থগিত হয়ে যায়। তবে এরই মধ্যে কিছু সরকারি চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২০, যেখানে প্রায় ৩২ হাজার ৫০০ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে।

কিন্তু করোনা সংক্রমণের কারণে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর স্নাতক (২০১৯) শেষ বর্ষের পরীক্ষা শেষ না হওয়ায় আবেদন করা সম্ভব হয়নি। ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। আবেদনের সময়সীমা ছিল ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের অনেক আগেই ২০১৯ সালের স্নাতক পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়ে যেত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চাকরি বিসিএসে অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করার সুযোগ পেলেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে আবেদন করার সুযোগ পাননি। তা ছাড়া ৪৩তম বিসিএসের আবেদনের তারিখ করোনার কারণে দুবার বর্ধিত করা হয়েছে।

এখন আমাদের যৌক্তিক চাওয়া, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ চাকরি বিসিএসের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যদি করোনা মহামারির কারণে শিথিলতা আনা যায়, তাহলে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কেন নয়? দেশের চাকরিজগতে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে মেয়েদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত রয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নারী শিক্ষকদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রে মাতৃত্বের ভূমিকাও রাখতে হয়। সংগত কারণে নারীরা উচ্চশিক্ষা অর্জন করেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকতা পেশাকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন।

কিন্তু এই প্রথম প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ছেলেমেয়ে উভয়ের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা স্নাতক চাওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, মেয়েদের জন্য ৬০ শতাংশ কোটা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষাগত যোগ্যতার কারণে অনেকে প্রার্থী আবেদন করতে পারেননি। এ অবস্থায় অন্ততপক্ষে বিসিএসের মতো অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দিয়ে আবেদন করার সুযোগ থাকলে আমরা বঞ্চিত হতাম না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ, উপরিউক্ত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রাথমিকের নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির তারিখ পুনর্বিবেচনা করে আমাদের আবেদনের সুযোগ দিলে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

মোছা. নিপা আক্তার
সহকারী শিক্ষক পদে আবেদনের সুযোগবঞ্চিত একজন শিক্ষার্থী
স্নাতকোত্তর শ্রেণি, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়