আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি এড়াতে সচেতনতা জরুরি

আজ ১২ অক্টোবর বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস। প্রতিবছর এই দিনটি সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও পালন করা হয়। দিবসটি পালনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে জনমনে ধারণা ও সচেতনতা তৈরি করা। তার জন্য শুরুতেই আমাদের আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা আবশ্যক। আর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত এই বাতরোগ মূলত অস্থিসন্ধি বা জয়েন্টের প্রদাহ। এটি এক বা একাধিক জয়েন্টকে আক্রান্ত করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এটি প্রবীণদের মধ্যেই বেশি পরিলক্ষিত হয়। গবেষণায় দেখা যায় প্রতি পাঁচজনের একজনই এই রোগে আক্রান্ত।

আর্থ্রাইটিসের সবচেয়ে সাধারণ ধরন হলো অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস। আর্থ্রাইটিস মূলত অনেকগুলো ধরনের সমন্বিত রূপ। প্রায় ২০০ ধরনের আর্থ্রাইটিস সমস্যার কথা জানা যায়। তবে কিছু সাধারণ ধরন খুব বেশি পরিচিত।

দৈনন্দিন জীবনে খুব বেশি কাজের দরুন হাড়ের জয়েন্টে অতিরিক্ত চাপ পড়ে যে ব্যথার সৃষ্টি হয় সেটাকে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বলে। মানবদেহের ইমিউন সিস্টেম অনেক সময় ভুলক্রমে জয়েন্ট সেলকে আক্রমণ করে বসে। এ কারণে জয়েন্টে প্রদাহ তৈরি হয়, যা রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস নামে পরিচিত। রক্তের মাধ্যমে জীবাণু যখন হাড়ের জয়েন্টে গিয়ে ইনফেকশনের সূচনা ঘটায়, তখন তীব্র ব্যথার সৃষ্টি হয়, যেটাকে সেপটিক আর্থ্রাইটিস বলে। তা ছাড়া জয়েন্টে ইউরিক অ্যাসিড জমা হলে অথবা ক্যালসিয়াম পাইরুফসফেট জমা হলে বাতব্যথা নামে পরিচিত অন্য ধরনের আর্থ্রাইটিসের সৃষ্টি হয়।

আর্থ্রাইটিসের সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলো সাধারণত হাড়ের জয়েন্টের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। সাধারণত জয়েন্টে অতিমাত্রায় ব্যথা অনুভূত হওয়া। জয়েন্ট ফুলে যাওয়া। হাতের আঙুল, কনুই, কাঁধ, হাঁটু, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় ব্যথা অনুভব করা। শরীরের উভয় পাশে একসঙ্গে ব্যথা অনুভব করা। যেমন হাতে হলে দুই হাতের জয়েন্টে একসঙ্গে ব্যথা করে, ফুলে যায়। অনেক সময় শরীর দুর্বল লাগে, জ্বর জ্বর অনুভূতি হয়।

সাধারণত বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। তা ছাড়া যেসব কারণ ঝুঁকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে, তার মধ্যে পরিবারে মা-বাবা, ভাই-বোনদের আর্থ্রাইটিসের ইতিহাস থাকলে। অন্যদিকে গাউটে আক্রান্ত অধিকাংশই পুরুষ। তা ছাড়া আগে থেকে কোনোভাবে জয়েন্টে আঘাতপ্রাপ্ত থাকলে। অতিরিক্ত স্থূলতা এই ব্যাধির সম্ভাব্যতা বাড়িয়ে দেয়। যদিও প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তবে কেউ আক্রান্ত হয়ে গেলে কিছু বিষয় সাময়িকভাবে অবস্থার উন্নতি সাধন করতে পারে। ওষুধ ব্যবহারের চেয়ে দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাপনের পদ্ধতির দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি আরোপ করলে এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। যেমন প্রাকৃতিক প্রতিকারের ক্ষেত্রে একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুষম খাদ্যাভ্যাস তৈরি করা। নিয়মিতভাবে যথাযথ ব্যায়াম করা, ধূমপান সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা, অ্যালকোহল গ্রহণ না করা।

এমন কোনো নির্দিষ্ট খাদ্য নেই যা বাতের চিকিৎসাতে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে কিছু কিছু খাবার বাতের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে থাকে। যেমন সামুদ্রিক মাছ, বাদাম, ফল, শাকসবজি, মটরশুঁটি, জলপাই তেল, আস্ত শস্যদানা ইত্যাদি। সব সময় শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা। শরীরের স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখা। ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত চেক-আপ করানো এবং অপ্রয়োজনীয় চাপ থেকে জয়েন্টগুলোকে রক্ষা করা। পরিমিত ঘুমানো, মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। তা ছাড়া নিয়মিত হাঁটা, সাইকেল চালানো, সাঁতার কাটার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অবস্থার অনেক উন্নতি সাধন করতে পারে।

তবে যাদের এই সমস্যা আছে, তাদের কিছু বিশেষ দিকে সতর্ক নজর রাখতে হয়। যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অর্ধেকেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক আর্থ্রাইটিসের সঙ্গে উচ্চ রক্তচাপের কথা প্রকাশ করে। উচ্চ রক্তচাপ যেহেতু হৃদ্‌রোগের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, সেহেতু দেখা যায় আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে সাধারণভাবে হৃদ্‌রোগের ঝুঁকিও পরিলক্ষিত। ধূমপান দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসযন্ত্রের অবস্থার সঙ্গে যুক্ত, আর্থ্রাইটিসে আক্রান্ত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে দ্বিতীয় সবচেয়ে সাধারণ জটিলতা হচ্ছে ধূমপান করা।
আমরা জানি প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই উত্তম। তাই আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যার ক্ষেত্রে আমাদের পূর্বসচেতনতা অধিক জরুরি। যেমন নিয়মিত ব্যায়াম করা, সব ধরনের মাদকদ্রব্য পরিহার করা, স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করা। পাশাপাশি আরও যেসব বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন জরুরি, তা হলো শারীরিকভাবে অতিরিক্ত পরিশ্রম না করা, জয়েন্টে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চাপ না দেওয়া।

অন্যদিকে সামান্য ব্যথা হলেই ব্যথার ওষুধের ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা আমাদের কিডনি, লিভার বিকল থেকে শুরু করে অনেক জটিল সমস্যার জন্ম দিতে পারে। তাই সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত যখন–তখন ওষুধ ব্যবহার না করে লক্ষণ প্রকাশিত হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া। বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবসে মানুষের মধ্যে আর্থ্রাইটিস সম্পর্কে সচেতনতার নিমিত্তে বিশদ আকারে প্রচারণা চালানো আবশ্যক। জীবনধারণ পদ্ধতি, খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে জনমতে স্বচ্ছ ধারণা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাধিটি অনেকাংশেই কমানো সম্ভব।

আনোয়ার হোসেন
শিক্ষার্থী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়