ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যু কেন?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পুকুর
ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের পুকুরে ডুবে মারা গেল আরও একটি তরুণ প্রাণ। এর আগেও পুকুরটিতে ডুবে শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার মারা শিক্ষার্থীর নাম আরিফুর রহমান পলাশ। তিনি ছিলেন নৃবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ) ছাত্র। হলটির বর্ধিত ভবনের একটি কক্ষে থাকতেন।

মৃত্যু এবং জীবনের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কী ভেবেছিলেন শিক্ষার্থী পলাশ? যখন পানিতে তলিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর শরীরের একেকটি লোমকূপ তখন কী চলছিল পলাশের মস্তিষ্কে? একটি সঠিক ব্যবস্থাপনা কি বাঁচাতে পারত না পলাশের জীবন?  পলাশ একটি অনাকাঙ্ক্ষিত বিচ্ছিন্ন ঘটনা, নাকি বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের একটি অবিচ্ছিন্ন এবং অবিচ্ছেদ্য খণ্ডচিত্র?

সমস্যা

১. ৯৯৯–এ প্রতিনিয়ত কল দেওয়ার পরেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এই ডিজিটাল বাংলাদেশে একটি উন্নত ডিজিটাল নিরাপত্তা সেবা পাওয়া এখনো এত দুষ্কর কেন? ভাবুন তো! আজ যদি একটি নিরাপত্তা দল তৎক্ষণাৎ চলে আসত, তাহলে কি বাঁচানো যেত না পলাশকে?
২. বন্ধুরা, অগ্রজ, অনুজেরা মিলে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছে পলাশের জীবন রক্ষায়। কাঁধে করে দৌড়েছে অনেকখানি পথ। ইমার্জেন্সিতে একেকটি মুহূর্ত কত মূল্যবান, তা বুঝি কারও অজানা?
৩. ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আসে ঘটনার প্রায় ২৫ মিনিট পর। অথচ ঢাকেশ্বরী থেকে জহুরুল হলের দূরত্ব পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের বেশি হওয়ার কথা নয়।
৪. হল কর্তৃপক্ষের একজন মানুষও পাওয়া গেল না? অনেকে শুনেছি ভিডিওচিত্র ধারণে ব্যস্ত ছিলেন।

৫. এত বড় বড় একেকটি হল। হঠাৎ মধ্য রাতে হার্ট অ্যাটাক কি কারও হতে পারে না? কিংবা অন্য কোনো মেডিকেল ইমার্জেন্সি? এই ইমার্জেন্সি মোকাবিলা করার উপায় কি? ঢাকা মেডিকেল ইমার্জেন্সি? পলাশকে নিয়ে যাওয়ার ২০ মিনিটেও একজন ডাক্তার পাওয়া যায়নি। ইমার্জেন্সির ২০ মিনিট বুঝছেন তো! আপনি নন তো পরবর্তী পলাশ!
৬. মেডিকেল সাপোর্ট তো দূরের কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ে ঠিকঠাক একটি ফার্মেসিও নেই। মেডিকেল সাপোর্ট বলতে ওই মেডিকেল রুম, আর হলে হলে টুকটাক কিছু মেডিসিন। পুরো ক্যাম্পাসকে সাধারণ ফার্স্ট এইডের আওতায় এখনো আনা গেল না কেন?

সমাধান

১. বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি নিজস্ব হেল্প সেন্টার থাকলে কেমন হয়? একটি নিজস্ব সাপোর্ট সেন্টার। খামখেয়ালি মেজাজের নয় একটি তৎপর দল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদেরও এখানে সংযুক্ত করা যেতে পারে। এতে একদিকে সাময়িক-কর্মসংস্থানের সুযোগ যেমন হবে, সে সঙ্গে একটি তৎপর দল পাওয়া যাবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত। শিক্ষার্থী জানে শিক্ষার্থীর বেদন।
২. প্রতি হলে একজন ডাক্তার। বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব অর্থায়নে করতে পারে। বছর ঘুরে মোট বাজেটের গা স্পর্শ করতেও পারবে না এ খরচ।
৩. প্রতি হলে সম্ভব না হলেও পাশাপাশি বা কাছাকাছি একাধিক হলের জন্য একটি করে অ্যাম্বুলেন্স বরাদ্দ হোক। স্বপ্নের লাল বাসে ছড়তে এসে শেষ বেলায় একটা গাড়ির অভাবে মৃত্যুকে আলিঙ্গন কতটা সমীচীন এবং নৈতিক?

৪. যোগ্য জনবল তৈরি। মেডিকেল সাপোর্টের অধীনে প্রতি হল থেকে অন্তত ১০০ জনকে বেসিক ফার্স্ট এইড শিক্ষা দেওয়া হোক। এতে যেমন যোগ্য জনবল তৈরি হবে, সে সঙ্গে পাওয়া যাবে মৃত্যুকে মোকাবিলা করার কিছু সময়।
আর কোনো স্বপ্নের, কোনো তরুণের অপমৃত্যু না হোক। প্রত্যন্ত অঞ্চলে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করা মানুষ ভাবে যে, এই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এলে বুঝি আমি বেঁচে যাব। অথচ ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বসে একেকটি প্রাণ ঝরে যাচ্ছে শুধু একটি উন্নত মেডিকেল সাপোর্টের অভাবে।
কী মর্মান্তিক! মৃত্যু অদ্ভুত। আরও অদ্ভুত এখানের জীবনধারা, এখানে বেঁচে থাকা!

সালমান ফারসি
শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়