বন্ধ হোক আইপিএল জুয়া

চলছে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ঘরোয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল)। বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় এবং সফল ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হলো আইপিএল। এই করোনা মহামারির মধ্যেও আইপিএল খেলা চলছে। এর সঙ্গে সঙ্গে আইপিএল নিয়ে চলছে জুয়ার রমরমা কারবার। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের কথা আমরা সবাই জানি। কিন্তু ঘরোয়া পর্যায়েও জুয়া খেলা ছড়িয়ে পড়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে জুয়া খেলার জন্য খেলার মাঠে যেতে হয়, আর ঘরোয়া জুয়া খেলার জন্য অনেকে টেলিভিশনের পর্দায় জড়ো হয় অথবা ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে। গ্রাম থেকে শহর অথবা শহর থেকে গ্রাম সব জায়গায় এই জুয়ার প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। সাধারণত যুবকেরাই এতে অংশ নেয়। এই খেলা নিয়ে বিভিন্নভাবে জুয়ার কারবার চলে। এভাবে অনেকেই রাতারাতি বিপুল টাকার মালিক হয়ে যায়, আবার অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়।

আইপিএল খেলা নিয়ে অনেক রকম জুয়া খেলা হয়। ম্যাচের ফলাফল নিয়ে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জুয়া খেলা হয়। এ ছাড়া কোন ওভারে কত রান হবে? কোন বোলার কত উইকেট পাবে? কোন ব্যাটসম্যান কত রান করবে? শেষ ওভারে কত রান হবে? এমনকি কোন বলে কত রান হবে—এসব নিয়ে বাজি ধরা হয়।

আইপিএল নিয়ে জুয়া চলতে দেখা যায় গ্রামের অলিতে-গলিতে অথবা শহরের অলিতে-গলির দোকানগুলোতে। সেখানে মানুষের উপচে পড়া ভিড় থাকে। অনেকে বিনোদনের জন্য খেলা দেখে আবার অনেকে জুয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। এই জুয়া মূলত ১৫ থেকে ৩৫ বছরের যুবকেরাই বেশি খেলে থাকে। ২০০–৫০০ থেকে শুরু করে হাজার হাজার টাকার জুয়া ধরা হয়। বিশেষ করে যদি দুর্বল কোনো দলের সঙ্গে শক্তিশালী কোনো দলের খেলা থাকে তাহলে দুর্বল দলের জন্য তিন থেকে চার গুণ পর্যন্ত টাকার লোভনীয় অফার দেওয়া হয়। অনেক তরুণ এই ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে। জুয়া খেলার টাকা সংগ্রহ করতে অনেকে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই-রাহাজানির মতো অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ে। পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়। সামাজিক অবক্ষয় সর্বনিম্ন স্তরে চলে যায়।

একটি ছোট্ট ঘটনা, কয়েক দিন আগে এক রাতে আমি কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে আমার গ্রামে এক বন্ধুর দোকানে পিকনিক করছিলাম। অনেক রাত তখন। দোকানে কেউ নেই। শুধু আমরা কয়েকজন বন্ধু আইপিএল খেলা দেখছি। ম্যাচের পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে রাজস্থান রয়্যালস হেরে যাচ্ছে এবং মুম্বাই ইন্ডিয়া জিতে যাচ্ছে। সেই সময় হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার এক বন্ধুকে অনেক চিন্তিত লাগছে। তার আচরণ অস্বাভাবিক লাগছে এবং রাজস্থান রয়্যালস হেরে যাওয়াতে সে অনেকটা বিষণ্ন হলো। তার কিছুক্ষণ পর তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম সে বাজি ধরেছিল রাজস্থান রয়্যালসের পক্ষে। পুরো ১০০০ টাকা সে হেরে গেল। আরও জানতে পারলাম সে এমন বাজি নিয়মিত ধরে আইপিএল খেলাকে কেন্দ্র করে। কোনো দিন জেতে আবার কোনো দিন হেরে যায়। আমি আরও জানতে পারলাম এর সঙ্গে গ্রামের অনেক ছেলেই জড়িত। তারা নিয়মিত জুয়া খেলে আইপিএল নিয়ে।

বর্তমানে জুয়া খেলার জন্য অনলাইনে কিছু সাইটও রয়েছে। এসব সাইটে রীতিমতো জুয়ার আসর বসে। তার মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাইট ‘বেট ৩৬৫’। এখানে বিশ্বের যেকোনো দেশের ১৮ বছর বয়সের ওপরের যেকোনো ব্যক্তি অ্যাকাউন্ট খুলে বাজি ধরতে পারে। প্রতিটি খেলার লাইভ স্ট্রিমিং হয় এখানে। প্রতিদিন লাখ লাখ ভিজিটর এখানে ভিজিট করেন। মোবাইল ব্যবহার করেও খুব সহজে এই সাইট চালানো যায়। তাই অনেকে বাজি ধরে রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চেষ্টা করে। অনেকে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। আবার বেশির ভাগই সর্বস্ব হারায়। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এ রকম একটি জুয়ার সাইট সত্যি আমাদের জন্য অশনিসংকেত।

ইতিমধ্যে কিছু পত্রপত্রিকায় এ বিষয়ে লেখালেখি হলেও তার পরিমাণ অতি নগণ্য। কিন্তু সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এই জুয়া খেলা। বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকায় যুবকেরা বেশি পরিমাণে এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কিছু টাকা লাভের আশায়। কিন্তু এর পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে। তাই পুলিশ প্রশাসনকে এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। পরিবার ও সমাজকে সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে পরিবারের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছেলেরা কোথায় যায়, কী করে তার খোঁজ রাখতে হবে পরিবারকে। অন্যথায় করোনাভাইরাস মহামারি এবং ধর্ষণ মহামারির মতো আইপিএল জুয়াও মহামারি আকার ধারণ করবে বলে আমার ধারণা।

মো. লেমন বিশ্বাস

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]