বন্যাকবলিত এলাকায় এই ভয়ংকর সময়ে ভরসা কেবল মানবিকতা। অভূতপূর্ব বন্যা এক অদৃষ্টপূর্ব সংকট সৃষ্টি করেছে—বৃহত্তর সিলেটের প্রায় সর্বত্রই আজ বন্যার্তের হাহাকার। বিশেষ করে সুনামগঞ্জের প্রায় সব এলাকায় বানভাসি মানুষেরা অসহায় পড়েছে। যদিও সরকার বর্তমান সংকট মোকাবিলায় যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু এ রকম সময়ে সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে বন্যার্তদের সেবায় ভূমিকা নিতে হবে সমাজের প্রতিটি মানুষকে। কারণ, মানুষ মানুষের জন্য।
এক শ্রেণির মানুষ বড্ড প্রচারমুখী, তাই বন্যার্তদের হাতে কিছু বন্টন করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজের ছবি দিয়ে ঢাকঢোল পেটাচ্ছে। এসব দেখানো ও প্রচার করা বিলাসিতা ছাড়া কিছু নয়। এত টাকা, এত বস্তা দিয়েছি বা দিব ইত্যাদি ফেসবুকে লিখে নিজেকে নিজের প্রচারণা করা এ সময় কাম্য নয়। কারণ, পানিবন্দী মানুষের যন্ত্রণা কোনও নাটকের অঙ্গ নয়।
বন্যার পানি যাদের বসতবাটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে, যারা একটু পরিবার-পরিজন নিয়ে একটু নিরাপদ স্থানের সন্ধান করছেন, পরিবারের বয়স্ক অসুস্থ সদস্যটিকে নিয়ে অকূল সমস্যায় পড়েছেন কিংবা প্রসূতি ও ছোট ছোট শিশুসন্তানকে নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতার মুখে, তাদের সত্যিকারের সহায়তা দেওয়া কেবল সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। এখানে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে সামাজিক সংগঠন এবং সমাজসচেতন ব্যক্তিদের। ক্ষমতা যতই সীমিত হোক, আর্তের কল্যাণে এগিয়ে আসতে কোনও দোলাচলতা মনে না রাখাই কাঙ্ক্ষিত।
বন্যার সময় ত্রাণ বণ্টনের স্বচ্ছতা বজায় রাখাও সময়ের দাবি। একজন প্রকৃত বানভাসিই যাতে ত্রাণ পেতে পারেন, সেটা সুনিশ্চিত করতে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা নিতে হবে সামাজিক সংগঠনগুলোকে। দেখা গেছে, এক শ্রেণির মানুষ বন্যাসহ যে কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে অবৈধভাবে সরকারি, বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা নিতে লালায়িত থাকে। এর ফলে বাস্তবিক প্রয়োজন থাকা ব্যক্তি বঞ্চিত হন। এর পুনরাবৃত্তি ঘটতে থাকুক, সেটা কখনও চাইবে না সত্যিকারের মানুষেরা, যারা মানবিক। মনে রাখতে হবে, বিপন্নদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ বা বণ্টন স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন করা খুব সহজ বিষয়ও নয়। কিন্তু মানবিকতার স্বার্থে কিছুটা কঠোরতা অবলম্বন করে প্রকৃত বিপন্নদের বঞ্চিত হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে।
বন্যা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী আহরণ করার ক্ষেত্রে যাতে নাকানিচুবানি খেতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে প্রশাসনকে।
বন্যাকবলিত এলাকায় পণ্য পরিবহন করাটাও কঠিন হয়ে যায়। মজুতদাররা এর ভরপুর অবৈধ ফায়দা নেবে, সেটা খুব স্বাভাবিক। তবে এখানে প্রশাসনের দৃঢ়তা অব্যাহত থাকলে মানুষের দুর্গতি লাঘব হবে বই বাড়বে না। অন্তত আলু, পেঁয়াজ, চাল, সয়াবিন ইত্যাদি যাতে আকাশছোঁয়া না হয়, সেটা নিশ্চিত করতেই হবে। মানুষের বিপদে যে মানুষের মানবিক সহায়তার হাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়ে থাকে, সেটা প্রমাণিত। তাই আশাবাদকে হাতিয়ার করে বিপদের মোকাবিলা করতেই হবে।
লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা