মাসে চারবার ঢাকায় যাওয়া থেকে চাকরিপ্রার্থীদের রেহাই দিন

এই মাসে তিনবার ঢাকা যাতায়াত করতে সাড়ে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চারবার যাওয়া–আসা করলে ছয় হাজার টাকা লাগত। আমি যেই শহরে মেসে থাকি, সেখানকার খরচ ও চাকরির আবেদন মিলে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা লাগে। তার মানে, প্রতি মাসে প্রায় ১১ হাজার টাকা প্রয়োজন! এই আর্থিক চাপ শুধু স্বাবলম্বী পরিবারের পক্ষেই সামলানো সম্ভব। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে কখনোই না।

টিউশনি থাকার কারণে কিছুটা সেই খরচ আমি সামাল দিতে পেরেছি। কিন্তু আমি এমন অনেককেই চিনি, যারা টাকা না থাকার কারণে ঢাকাতে পরীক্ষা দিতে যেতে পারে না। চাকরির আবেদন করে, কিন্তু পরীক্ষা দিতে যেতে পারে না। মেয়েদের ক্ষেত্রে আরও সমস্যা।

অনেকেই এখন আমাকে পরামর্শ দেবেন ঢাকাতে এসে থাকার জন্য। ঢাকায় এসে টিউশন ম্যানেজ করার জন্য। কথা হচ্ছে, এই সমস্যা শুধু আমার একার নয়। লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থীর ঢাকাতে থাকা কতটা বাস্তবসম্মত ভেবে দেখুন।

মেধাবীরা গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ পাবে, এটা সবারই প্রত্যাশা। কিন্তু মেধাবীদের একটা বড় অংশ যে তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সেটা নিয়ে কেউই ভাবছে না। ঢাকাকেন্দ্রিক পরীক্ষার কারণে দরিদ্র পরিবারের সন্তানেরা সেভাবে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাচ্ছে না। মেয়েরা আরও বেশি সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উচ্চশিক্ষিত হয়েও কর্মক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা রাখতে পারছে না।

বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা হলে দুর্নীতির আশঙ্কা বেশি, পিএসসির মতো করে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নিতে পারবে না, এসব কথা অনেকেই বলে থাকেন। এই প্রশ্নের উত্তরে একটা কথাই বলতে চাই, অতীতে দেখেছি ঢাকাতে অনুষ্ঠিত অনেক পরীক্ষাতেও অনিয়ম হয়েছে। আসলে কর্তৃপক্ষ চাইলে বিভাগীয় শহরে সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা নেওয়া অসম্ভব নয়। প্রমাণ হিসেবে এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার কথা উল্লেখ করতে চাই।

কথা হচ্ছে, কর্তৃপক্ষ চাইলে এই সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা নিন। যদি এটা সম্ভব না হয়, তবে সব প্রতিষ্ঠান মিলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নিন। প্রতিটি গ্রেডের জন্যও সব প্রতিষ্ঠান মিলে গুচ্ছ পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেওয়া যেতে পারে। এতে পরীক্ষার সংখ্যা কমে আসবে। মাসে চারবার ঢাকা যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। মাসে একবার ঢাকা যাওয়া–আসার খরচ বহন করা সবার পক্ষেই সম্ভব হবে। এতে অন্তত আগের তুলনায় একটু হলেও বেশি নিজের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ পাবে। বেকারদের প্রতি সদয় হোন। তাদের যোগ্যতা প্রমাণের সুযোগ দিন।

মো. মাহমুদ-আল-মেহেদী
ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর