তবুও কেন তাঁরা হলে থাকবেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে এ অঞ্চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯২১ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নানা সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো আবাসিক সুবিধা। চোখে নানা স্বপ্ন নিয়ে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁরা স্বপ্ন দেখেন একটি পরিপাটি হল ও কক্ষ। দেশে প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে যদিও কম-বেশি আবাসন সংকট রয়েছে তবুও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই সংকট কিছুটা নিরসন করা সম্ভব।

একজন নবীন শিক্ষার্থী নানা চড়াই-উতরাই পার করে একটা ভর্তি যুদ্ধের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে কাঙ্ক্ষিত আসন লাভ করেন। অনেক শিক্ষার্থী গ্রাম অঞ্চল থেকে বিভাগীয় শহরের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়ে প্রথমবারের মতো শহরে বসবাস শুরু করেন। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী ও তাঁর পরিবার আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় তুলনামূলক কম মূল্যে তাঁদের থাকা খাওয়ার একমাত্র আশ্রয় ও ভরসার আশ্রয়স্থল হয়ে দাঁড়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো।

কিন্তু আমাদের দেশের বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে দেখা যায় যে লেখাপড়া শেষ হয়েছে এবং ছাত্রত্বের মেয়াদ শেষ হয়েছে ১-৫ বছর আগে তবুও তাঁরা আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে এখনো হলে অবস্থান করছেন। এতে করে হল কর্তৃপক্ষ যেমন একদিকে নামমাত্র সিট ভাড়াটুকু হারাচ্ছেন অপরদিকে ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরেও তাঁদের নানা অপকর্মের দায়ও গ্রহণ করতে হচ্ছে হল প্রশাসনকে।

সাধারণত ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন থেকে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় অবস্থান করায় সাধারণত টিউশনি, খণ্ডকালীন চাকরি ও অন্যান্য কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকায় তাঁরা কিছুটা সচ্ছল। অন্যদিকে সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া একজন নবীন শিক্ষার্থী যার কাছে শহরের প্রায় অধিকাংশ এলাকা অচেনা সেখানে রাতারাতি টিউশন, খণ্ডকালীন চাকরি ও অন্যান্য কাজ পাওয়া মোটেই সহজ সাধ্য নয়।

কিছু শিক্ষার্থীর পারিবারিক আর্থিক অবস্থা ভালো না থাকায় তাঁদের পক্ষে মেসে কিংবা ভাড়া বাসায় থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে এবং কোনো কোনো শিক্ষার্থীর একমাত্র অবলম্বন হয়ে ওঠে টিউশনি ও খণ্ডকালীন চাকরি।

এর মধ্যে আবার কিছু বিশ্ববিদ্যালয় শহর থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে টিউশনি বা অন্যান্য কাজ পাওয়া মোটেই সম্ভব হয় না। সে ক্ষেত্রে তাঁদের যদি অন্তত আবাসিক সুবিধাটুকু বিশ্ববিদ্যালয় এবং হল প্রশাসন নিশ্চিত করতে পারতো তাহলে তাঁরা কিছুটা আর্থিকভাবে উপকৃত হতেন।

কিন্তু দেখা যায় যে, আবাসিক হলগুলোতে কিছু সিট থাকলেও তা ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের দখলে থাকায় নতুন শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ পাচ্ছে না। সেই কাজটি করতে কর্তৃপক্ষ কতটা আন্তরিক সেটিও ভাববার বিষয়। চাকরি পাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত ছাত্রত্বের মেয়াদ শেষ হওয়া শিক্ষার্থীরা নাজুক অবস্থায় থাকলেও তাঁরা কি গ্রামে থেকে আসা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের চেয়েও কি বেশি নাজুক অবস্থায় থাকেন?

সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো ছাত্রত্ব শেষ হওয়ার পরেও তাঁদের দায় কেন হল প্রশাসন নেবে? প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন আবাসিক হলে সিট না পাওয়ায় তাঁরা কো-কারিকুলার কার্যক্রম, সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং তাঁদের যোগ্য নেতৃত্বের বিকাশে বাধার সৃষ্টি হচ্ছে।

যদি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নবীন শিক্ষার্থীদের আবাসিকগুলোতে সিট বরাদ্দ দেওয়া যেত তাহলে নবীন শিক্ষার্থীরা শুধু আবাসিক সুবিধাই পেতেন না বরং তাঁরা একাধারে সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি বিষয়ে হলের অগ্রজ শিক্ষার্থীদের হতে খুব সহজে জ্ঞান লাভ করতে পারতেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন অরাজনৈতিক ও সামাজিক  সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভের পাশাপাশি যোগ্য নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করে দেশ ও জাতিকে এগিয়ে নিতে আরও বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালনে সহায়ক হয়ে উঠত।

মো. হেলাল মিয়া
শিক্ষার্থী, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুর।