একটা সময় গ্রামগঞ্জে টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখার ধুম পড়ত। পাঁচ–সাত গ্রাম মিলেই থাকত একটা টিভি, তা–ও রঙিন টিভি নয়। গৃহিণীরা নিরিবিলি বসে অথবা কাজের ফাঁকে দেখতেন পছন্দের ছবি। নিজেদের বাড়ির যাবতীয় কাজ শেষ করেই ছুটে আসতেন নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত সিনেমা দেখার জন্য। তখন তাঁদের মধ্যে একধরনের উৎকণ্ঠা আর আনন্দ বিরাজ করত। কী হবে শেষমেশ সিনেমায়? শান্ত পরিবেশ কিংবা কোনো এক গাছের নিচেই বসানো হতো টিভি। সবাই গোল হয়ে বসত সিনেমা উপভোগ করার জন্য।
তখনকার সময়ের সিনেমাগুলোর মধ্যে থাকত গ্রামীণ জীবনের মানুষের নানা কর্মকাণ্ড ও শিক্ষণীয় বিষয়। থাকত নানা সামাজিকতা। সিনেমায় ব্যবহৃত হতো আঞ্চলিক গান এবং রাখালের বাঁশির সুরমিশ্রিত গ্রামীণ জীবনের নানা কর্মকাণ্ড। এই সিনেমাগুলোয় থাকত আবেগ, ভালোবাসা আর শ্রদ্ধা। থাকত পোশাক–পরিচ্ছদে সজীবতা।
আগেকার দিনে মানুষ ওয়াসিম-অলিভিয়া অভিনীত ছায়াছবি দেখত। দেখত দেশের খ্যাতিমান পরিচালকদের অনেক চলচ্চিত্র। দেখত আজিম-সুজাতা, রাজ্জাক-সুচন্দা, রাজ্জাক-কবরী, রাজ্জাক-ববিতা রাজ্জাক-শাবানা জুটির ছায়াছবি। দেখত ফারুখ-কবরী, ফারুখ-ববিতা, ওয়াসিম-অঞ্জু ঘোষ, ইলিয়াস কাঞ্চন-রোজিনা, ইলিয়াস কাঞ্চন-অঞ্জু ঘোষ, ইলিয়াস কাঞ্চন-সুচরিতা জুটির বহু ছায়াছবি। চিত্রনায়ক আলমগীর-শাবানা ও খলনায়ক প্রয়াত জসীম অভিনীত ছায়াছবিও কম দেখেনি। শাবনূর-ফেরদৌস অভিনীত ছায়াছবিও দেখত অনেক। তা ছাড়া কলকাতার বাংলা ছায়াছবি, উত্তম-সুচিত্রা জুটির অনেক ছবিও।
গ্রামগঞ্জের পাশাপাশি নগরেও ছিল সেই সিনেমা দেখার যথেষ্ট প্রচেষ্টা। একসময় এই সিনেমা হলে একটা টিকিট কেনাকে কেন্দ্র করেও লাগত নানা হুলুস্থুল। সিনেমা হলের পাড়াতেও থাকত থমথমে অবস্থা। কিন্তু এখন আর সেই থমথমে অবস্থার আশঙ্কায় মানুষকে থাকতে হয় না। মানুষ এখন সিনেমা হলের সামনেই যেতে চায় না। বর্তমানে আকাশপ্রযুক্তি হয়েছে মুক্ত, ঘরে বসেই দেখতে পারে দেশ-বিদেশের ছায়াছবি। ধনী-গরিব সবার ঘরে ঘরে কেব্ল নেটওয়ার্কের সংযোগ। টিভি খুললেই দেখতে পায় বাংলা, হিন্দি ও ইংরেজি ছবি; যত চ্যানেল তত ছবি।
এখনকার দিনে আর সামাজিক চলচ্চিত্র বেশি একটা নির্মাণ করা হয় না। বর্তমান চলচ্চিত্রে সামাজিকতার নামমাত্র ছোঁয়া নেই। আছে ভিনদেশি ছায়াছবির হুবহু নকল দৃশ্য।
এখনকার অনেক সিনেমায় ছবির প্রথমার্ধেই শুরু হয় নায়ক-ভিলেনের গালাগালি, যা সভ্য সমাজে ব্যবহার করা হয় না, শুনতেও ভালো লাগে না। চলচ্চিত্রে এই অশ্লীল ভাষা শুরু হয়েছিল আশির দশক থেকে, যা এখনো চলছে। সে জন্যই দিন দিন এসব সিনেমার প্রতি শুরু হয়েছে অনীহা আর বিরক্তি। ডিজিটাল সিনেমার নামে আসলে কী তৈরি হচ্ছে, সেটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
তৌহিদ-উল বারী
বাকলিয়া সরকারি কলেজ, চট্টগ্রাম।