একটি স্কুল আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ছোটবেলা থেকে সেটিকে দেখে দেখে বড় হয়েছি, সেখানে পড়াশোনা করেছি। সে স্কুলের মাঠে খেলাধুলা করে বড় হয়েছি, বিকেল হলেই শিশু, কিশোর, যুবক সবার আনাগোনা থাকত সেখানে। স্কুলটিকে ঘিরে সরব থাকত পুরো গ্রাম। এখন যেন এ স্কুলমাঠে অভিমানে ঝিঁঝি পোকাও আসে না, নীরবতার পাহাড় গড়ে উঠেছে। গেঁথে গেঁথে ওঠানো স্কুলের দেয়ালের ইটগুলো যেন অসহ্য যন্ত্রণায় ছটফট করছে। এই ইটগুলো যেন প্রতিনিয়ত কাঁদছে।

নিরীহ শিক্ষক কর্মচারীরাও যেন মূক, তিন চার বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে চলছে দিন, বেতন বন্ধ, আশায় থাকে বেতন পাবে, বেতন বন্ধের এ তালা যেন খুলছেই না। কীভাবে চলবে সংসার? এমন কঠিন প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ প্রতিনিয়ত তারা। দুজন অবসরপ্রাপ্ত বৃদ্ধ শিক্ষক সারা জীবন অপেক্ষা করেছেন শেষ জীবনে সুখে থাকবেন, সে আশা ছেড়ে এখন তারা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

এই স্কুলেরই দুজন শিক্ষক এখন প্রধানশিক্ষকের পদলোভে হাইকোর্ট-সুপ্রিমকোর্ট নিয়ে ব্যস্ত। নিজেদের নামের অক্ষর জ আর ল এর মতোই জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করছেন একটি গ্রামের শিক্ষার সম্ভাবনাকে। এদের সাথে হাত মিলিয়েছে কিছু কূপমণ্ডূক ব্যক্তি।

এ গ্রামের যারা সচ্ছল মা-বাবা তারা তাদের সন্তানকে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াচ্ছেন, কিন্তু যারা গরিব তাদের সন্তানদের পথ কই? তাদের শিক্ষার প্রদীপ যেন নিভে যাচ্ছে। শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি, কোনো সভ্যতা, কোনো ব্যক্তি, কে কবে মুক্তি পেয়েছে!

শিক্ষা যে সৌন্দর্যের প্রতীক তা বোঝা যায় গ্রামটিকে দেখলেই। কিন্তু শ্রীনগর নামের এই গ্রামটি যেন স্কুল ধ্বংসের জন্য সৌন্দর্যহীনতায় ভুগছে।

অপেক্ষা, শুধু কবে আসবে সেই হারিয়ে যাওয়া দিনের মতো স্কুল ছুটি হলে দল বেঁধে যাওয়া ছাত্র ছাত্রীর গুঞ্জন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হলে হৈ হৈ রৈ রৈ পড়ে যেত এলাকাজুড়ে, সে উৎসবের আমেজ কবে ফিরবে? নাকি কখনো না?

রিফাত আরা নাজনীন
মির্জাগঞ্জ, পটুয়াখালী