সবাইকেই চাঁদা দিতে হয়, সেই টাকা কার কাছে যায়?

রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ও আজিমপুর এলাকায় চাঁদাবাজি মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। প্রশ্ন হলো এই চাঁদাবাজির পেছনে আসল হাতটা কার?

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার এক মনোহারি মালামাল বিক্রেতার সঙ্গে সম্প্রতি আমার আলাপ হয়। তাঁর ভাষ্য হলো, ‘মামা, আমার প্রতিদিন ১৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। আমার বেচাবিক্রি প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। তার থেকে খরচ বাদ দিলে হাতে ৫০০–৫৫০ টাকা থাকে। এর থেকে যদি ১৫০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়, তাহলে পেট চলবে কেমনে? কিছু কিছু লাইনম্যান (যারা রাজনৈতিক দল ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নামে চাঁদা তোলে) আছে যারা ডাকাত, তারা তো চাঁদা নেবেই, সঙ্গে বলবে চা-বিড়ি খাওয়ার জন্য কিছু দে। এখন আপনি বলেন, আমার তো বউ ও বাচ্চা আছে? দুই বেলা খাওয়ার মতো যা কামাই করি, তাতেও এদের ভাগ দিতে হয়। আর কাদের কাছেই–বা বিচার চাইব?’

এই বিক্রেতার কথা আসলেই চমকে দেওয়ার মতো। তিনি চাঁদা দিচ্ছেন কিন্তু চাঁদাটা আসলে কার হাতে যাচ্ছে, তিনি জানেন না। আমার সঙ্গে কথা বলার সময় বিক্রেতা ছিলেন ভীত। ঠেলাওয়ালা, ফেরিওয়ালা সবাইকে চাঁদা দিতে হয়।

দোকান অথবা ঠেলাগাড়ির সাইজ এবং বিক্রির অনুপাতে তাঁদের চাঁদা দিতে হয়। আইসক্রিমওয়ালাকে গুনতে হয় ১৫০ টাকা। কলা বিক্রেতা দিচ্ছেন ১৪০ টাকা, বিস্কুটওয়ালা ২০০ থেকে ২৫০, কতবেলের ঠেলাওয়ালা ৪০–৬০, ঝালমুড়িওয়ালা ৬০, পেয়ারা বিক্রেতা গুনছেন ২০–৪০ টাকা, ফুচকা-ভেলপুরি বিক্রেতা ২০০-২৫০ টাকা। এটা রাজধানীর নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ও আজিমপুর এলাকার দোকান ভেদে চাঁদার পরিমাণ। জায়গাভেদেও চাঁদার পরিমাণ বাড়ে ও কমে।

সমাজের খেটে খাওয়া মানুষগুলোই আজ শোষিত হচ্ছে। না পারছেন এই শোষণের ভেতর সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে, না পারছেন শোষণ থেকে বেরিয়ে আসার জন্য প্রতিবাদ করতে। কারণ? কারণ, তাঁদের পেটে যে ক্ষুধা, আর প্রতিবাদ করতে গেলে তো দুই বেলা খাবার কেনার টাকাটাও উপার্জন করার রাস্তাটি হারাতে হবে। নালিশ জানাবেন তাঁরা কার কাছে?

  • ফরহাদ জুবায়ের
    শিক্ষার্থী, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।