বাউবি আইন প্রোগ্রামে সেমিস্টার ফি এত বেশি কেন?

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষেপে বাউবি দেশের একমাত্র দূরশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ১৯৯২ আইন অনুযায়ী দেশের সর্বস্তরের শিক্ষাকে প্রান্তিক পর্যায়ের জনগোষ্ঠী, ঝরেপড়া সুবিধাবঞ্চিত, যে কোনো বয়সের শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ১৯৯২ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন কর্তৃক স্কুল অব ল অনুমোদন করা হয়। পরবর্তীতে স্কুল অব ল স্থগিত হওয়ায় আইন প্রোগ্রামটি সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও ভাষা স্কুলের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও বাউবি আইন প্রোগ্রামে অনার্স সম্পূর্ণ করতে প্রায় এক লাখ বিশ হাজার টাকা লাগে। যেখানে প্রতি সেমিস্টারে মাত্রাতিরিক্ত ফি নেওয়া হচ্ছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীদেরকে সেমিস্টারে প্রতি প্রায় ১৪,০০০-১৫০০০ টাকা প্রদান করতে হয়। এর মধ্যে  ৫টা কোর্সে প্রতি কোর্স ২২০৫ টাকা করে মোট ১১০২৫ টাকা, রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০০ টাকা, পরীক্ষা ফি প্রতি কোর্স ৩১৫ টাকা করে মোট ১৫৭৫ টাকা, সেমিস্টার নম্বরপত্র ফি ১০০ টাকা এবং একাডেমিক ক্যালেন্ডার ফি ৫০ টাকা করে সর্বমোট ১৩৭৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য, অযৌক্তিক এবং বেআইনি।

বাউবি আইন প্রোগ্রামে অধ্যয়নরত অধিকাংশ শিক্ষার্থী দরিদ্র, নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসেছে। এই মাত্রাতিরিক্ত সেমিস্টার ফি প্রদান করা এই শিক্ষার্থীদের পক্ষে খুবই কষ্টকর। যেখানে বাউবি আইন প্রোগ্রাম বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত, সেখানে এই অতিরিক্ত সেমিস্টার ফি মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি আইন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা স্কুল অব ল চালু, সেমিস্টার ফি কমানোসহ অন্যান্য সকল সমস্যার সমাধান কল্পে মাননীয় উপাচার্য, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা), উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) এবং রেজিস্ট্রার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছেন। এমনকি আন্দোলনও করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আশ্বাস দিয়েছিল, তারা শিক্ষার্থীদের প্রতিটা যৌক্তিক দাবি-দাওয়ার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানাচ্ছে এবং সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।

আইন প্রোগ্রামের প্রতিটা শিক্ষার্থীর এখন একটাই প্রশ্ন, বাউবি প্রশাসন আইন প্রোগ্রামের সেমিস্টার ফি কমাতে উদ্যোগ নিচ্ছে না কেন? প্রশ্ন জাগে, বাউবি কি কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান? তারা কি শিক্ষা নিয়ে ব্যবসা করতে চায়? এই কি বাউবি প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়ার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থনের নমুনা? এই কি তাদের কার্যকর সমাধান গ্রহণের নমুনা?

আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনতিবিলম্বে সেমিস্টার ফি কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং শিক্ষার্থীদের দাবির যথাযথ বাস্তবায়ন করবেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
শিক্ষার্থী, আইন প্রোগ্রাম
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়