মা ইলিশ রক্ষার নামে যেন জেলেদের হয়রানি করা না হয়

গত ২৬ সেপ্টেম্বর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় মা ইলিশ রক্ষার প্রজ্ঞাপন জারি করে। ওই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর ২২ দিন দেশের ৩৮ জেলায় মা ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেয় প্রশাসন। এর মধ্যে ২০ জেলায় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, বাকি ১৮ জেলায় ইলিশ মাছ ছাড়া অন্য মাছ ধরা যাবে।

আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা প্রধানত মাছ ধরে তাঁদের জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। কিন্তু দীর্ঘ ২২ দিন মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় তাঁদের অবস্থা শোচনীয়। সরকার তাঁদের ২২ দিনের খোরাকি ধরেছে মাত্র ২৫ কেজি চাল। এর মধ্যে অনেক জায়গার জেলেরা এখনো সেই চাল পাইনি। ১৪ অক্টোবর দৈনিক ‘যুগান্তর’–এর প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শুধু পাথরঘাটা উপজেলায় ১১ হাজার ৪১১ জন জেলে খাদ্যসহায়তা না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বর্তমান বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ২৫ কেজি চালে ২২ দিন জেলেদের সংসার চালানো অসম্ভব‌।

পেটের ক্ষুধায় জেলেরা যখন নদীতে নামছেন, তখনই জেলেদের সঙ্গে প্রশাসনের অমানবিক আচরণ দেখা যাচ্ছে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে, শরীয়তপুর জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন ইউনিট ১৫ অক্টোবর রাত থেকে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত শুধু শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায় ১৭টি জেলেদের মাছ ধরার ট্রলার, ৮ লাখ টন কারেন্ট জালসহ ৭২ জেলেকে আটক করে। এর মধ্যে ২৪ জনকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা এবং ৪৮ জনকে কারাদণ্ড ও জরিমানা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করে। এখানেই শেষ নয়, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় ও নৌ পুলিশের অভিযানে ১ লাখ ৫০ হাজার মিটার জাল পুড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রশাসন—‘হোক না সে যেই লোক, চোর চাই, নইলে মোদের যাবে মান’ স্লোগান নিয়ে মাঠে নেমেছে। চাঁদপুর থেকে শুরু করে কুড়িগ্রামের রৌমারী পর্যন্ত চলছে এ অভিযান।

আইন অনুযায়ী প্রশাসনের শুধু জেলেদের আটক ও জরিমানা করার বিধান ছিল। জাল বা ট্রলার পোড়ানোর অধিকার তাদের দেওয়া হয়নি। বরগুনার এক জেলে আক্ষেপ করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মোগো চাইল লাগবে না, ভারতীয় গো মাছ ধরা ঠেকান।’ আমাদের জেলেরা ইলিশের শত্রু না। এভাবে দমন-পীড়নের মাধ্যমে হয়রানি না করে তাঁদের নিয়ে প্রয়োজনীয় অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া যেত। তাঁদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসহায়তা দিয়ে মাছ ধরা বিরত রাখা যেত। আমাদের জলসীমা থেকে ভারতীয় জেলেরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রলার নিয়ে এসে প্রতিদিন ইলিশ মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। এটা তাঁদের নিত্যনৈমিত্তিক কর্মকাণ্ডে পরিণত করেছেন। সেখানে আমরা নিজের দেশের জেলেদের পেটে লাথি দিচ্ছি, তাঁদের জাল ও ট্রলার পুড়িয়ে দিচ্ছি। এই জাল জেলেরা সামান্য আয় দিয়ে কীভাবে কিনবেন, এটা কি আমরা কখনো ভেবে দেখেছি?

রাকিব হাসান

শিক্ষার্থী
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়