রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত টেগর লজ

ভুসিমাল ও পাটের ব্যবসা করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘টেগর অ্যান্ড কোম্পানি’।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে এপার বাংলার রয়েছে হৃদয়ের সম্পর্ক আর ওপার বাংলার সঙ্গে কবির ছিল নাড়ির সম্পর্ক। এ জন্য কবির কাছে দুই বাংলাই ছিল খুব আপন। দুই বাংলার বিভক্তি কবির হৃদয়ে দারুণ ব্যথা দিয়েছিল।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের জমিদারি ছিল এপার বাংলায়। এই জমিদারি দেখাশোনার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এপার বাংলার অনেক জায়গায় থেকেছেন, ঘুরেছেন আর তাঁর লেখার মধ্য দিয়ে তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন বাংলা সাহিত্যকে। তিনি অর্জন করেছেন পৃথিবীর সম্মানিত পুরস্কার নোবেল।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এপার বাংলার যেসব জায়গায় থেকেছেন, প্রতিটি জায়গায় তৈরি করা হয়েছে কবির স্মৃতিকেন্দ্র। তবে কবি সবচেয়ে বেশি থেকেছেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে। কবি এখানে দীর্ঘদিন থাকার কারণে এর নাম হয়েছে রবীন্দ্রকুঠিবাড়ি।
কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়ায় অবস্থিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত একটি বাড়ি। তবে শিলাইদহের থেকে অনেক কম পরিচিত এটি। কুষ্টিয়ার শিলাইদহের কুঠিবাড়ির যেমন বিপুল খ্যাতি ও পরিচিত, সে তুলনায় শহরের ভেতরের এই বাড়ি প্রায় অপরিচিত বলা যায়।

কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবার ১৮৯০ সালে ব্যবসায়িক প্রয়োজনে কুষ্টিয়া রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশে এই বাড়ি নির্মাণ করে। বাড়িটি থেকে কুষ্টিয়া রেলস্টেশন অল্প দূরে অবস্থিত। তৎকালীন এই বাড়ির জায়গা অনেক বেশি ছিল। ভুসিমাল ও পাটের ব্যবসা করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘টেগর অ্যান্ড কোম্পানি’।

এর এক অংশে কিছুকাল থাকার জন্য তৈরি করেছিলেন ‘টেগর লজ’ নামের দ্বিতল বাড়িটি। ভুসিমালের ব্যবসার পাশাপাশি কবি এখানে আখমাড়াইয়ের কল ও পাটের গাঁট তৈরির কলও বসিয়েছিলেন। পরে স্বদেশি আন্দোলনের চেতনায় টেগর লজকে কেন্দ্র করে একটি বড় তাঁতশালাও গড়ে তোলেন এখানে।

কবিকে ব্যবসার কাজে সাহায্য করতেন দুই ভ্রাতুষ্পুত্র সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর। প্রথম দিকে ব্যবসা ভালো চললেও পরে টেগর অ্যান্ড কোম্পানি দিনের পর দিন লোকসান করতে থাকে। পাটের ব্যবসা করতে এসে কবি লাখ টাকার ওপরে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। উপায়ান্ত না পেয়ে কবি খুলনার ফুলতলার দক্ষিণডিহির শ্বশুরবাড়ির এলাকার উদ্যমী যুবক যজ্ঞেশ্বরকে ব্যবসা দেখাশোনার দায়িত্ব দেন।

যজ্ঞেশ্বর বহু পরিশ্রম করে ডুবে যাওয়া টেগর অ্যান্ড কোম্পানিকে কোনোরকমে ভাসিয়ে রাখার চেষ্টা করেন। একসময় কবি নামমাত্র মূল্যে যজ্ঞেশ্বরের কাছে কোম্পানির সমুদয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল বেচে দেন। আর এখানকার দুই বিঘা জমি বছরে ৫০ টাকার বিনিময়ে বন্দোবস্ত করে দেন। পরে যজ্ঞেশ্বর এখানে ‘যজ্ঞেশ্বর ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক’ নামে একটি কারখানা গড়ে তোলেন।

আসিফ মাহমুদ

শিক্ষার্থী
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া