আর কত প্রাণ গেলে নালার পাশে বেষ্টনী ও স্ল্যাব বসবে?

গত ২৭ আগস্ট নালাতে পড়ে শিশু আরাফাতের মৃত্যু কাঁদিয়েছে সকলকে।
ছবি: সংগৃহীত

জলাবদ্ধতা চট্টগ্রাম নগরীর জন্য এক অভিশাপ। বছরের পর বছর এই অভিশাপ মাথায় নিয়ে চট্টগ্রামের মানুষ জীবনযাপন করছেন। দীর্ঘদিন এই জলাবদ্ধতার সাথে বসবাস করতে করতে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে এটা নতুন কিছু মনে হয় না। সামান্য বৃষ্টি হলেই শহরের প্রধান প্রধান সড়ক জলাবদ্ধতায় রূপ নিবে এটা একদম মুখস্থ বিষয়।

কিন্তু বৃষ্টি হলে জলাবদ্ধতার চাইতেও বড় ভয়ংকর হয়ে উঠছে ড্রেন অর্থাৎ নালাগুলো। ছোট-বড় এসব নালা অনেক সময় জলাবদ্ধতার কারণে দেখা যায় না, আবার অনেক সময় অসাবধানতার কারণেও এই নালাগুলোতে সাধারণ মানুষ পড়ে যায়। আর তখনই সৃষ্টি হয় দুর্ঘটনা। নিভে যায় জীবনের প্রদীপ। জলাবদ্ধতার কারণে এখন রাস্তার পাশে খাল-নালাগুলোই হয়ে উঠে একমাত্র মৃত্যুফাঁদ। আমরা যতই সতর্ক হয়ে চলাচল করি না কেন, অন্যান্য দুর্ঘটনার পাশাপাশি নালা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কাও বিরাট ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছে।

গত ২৭ আগস্ট শিশু আরাফাতের মৃত্যু কাঁদিয়েছে সকলকে। একটা ছোট্ট শিশুও বাঁচতে পারেনি। এই মৃত্যু থেকে শিশু, বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, কর্মজীবী, শিক্ষার্থী কারও রেহাই নাই। গত কয়েক বছরে চট্টগ্রামে নালায় পড়ে শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকটি মৃত্যুর পরও টনক নড়েনি সেবা সংস্থাগুলোর। দেওয়া হয়নি স্ল্যাব কিংবা নিরাপত্তা বেষ্টনী। তাদের অব্যবস্থাপনার খেসারত দিচ্ছেন নগরবাসী।

চট্টগ্রাম শহরকে অনিরাপদ হিসেবে বারবার প্রমাণিত করছেন দায়িত্বশীলরা। প্রকৃতপক্ষে এর দায় সিটি করপোরেশন কিংবা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কেউই এড়াতে পারে না। অথচ এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দায় চাপিয়ে দিব্যি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছে। এভাবে আসলে একটা শহর পরিচালনা হয় না। অথচ বছরের পর বছর ধরে এমনটাই হয়ে আসছে। এই একটা বিষয়ে যেন সবাই এসে আটকে যায়। মেয়র পরিবর্তন হয়, সিডিএ চেয়ারম্যানও পরিবর্তন হয় শুধু পরিবর্তন হয় না এই জলাবদ্ধতা আর নালায় পড়ে মৃত্যুর করুণ দৃশ্য।

গত বছরের ৬ ডিসেম্বর বোতল কুড়াতে গিয়ে নালায় নিখোঁজ হয় কামাল নামে ১২ বছরের এক শিশু। তলিয়ে যাওয়ার তিন দিন পর মির্জা খালে তার মরদেহ পাওয়া যায়।

২০২১ সালের ২৫ আগস্ট জলাবদ্ধতার সময় রাস্তা পার হতে গিয়ে মুরাদপুর এলাকায় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন সালেহ আহমেদ নামে একজন সবজি বিক্রেতা। এখন পর্যন্ত তার মরদেহের সন্ধান মেলেনি।

এর কয়েক দিন পর ৩০ সেপ্টেম্বর আগ্রাবাদ এলাকায় নালায় পড়ে মারা যান কলেজশিক্ষার্থী সেহরীন মাহমুদ সাদিয়া। ৯ জুন নগরীর আমিন জুট মিল এলাকায় নালায় পড়ে মারা যায় আল আমীন নামে এক শিশু।

একই বছরের ৩০ জুন ষোলোশহর চশমা হিল এলাকায় খালে রিকশা পড়ে মারা যান চালক সুলতান ও যাত্রী খাদিজা বেগম।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তথ্যমতে, চট্টগ্রামে নালা-নর্দমায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থান রয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি। যার সর্বশেষ বলি হয়েছেন শিশু আরাফাত। তবে নিয়মিত এসব নালায় পড়ে আহত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এত প্রাণহানি ও আহত হওয়ার পরও এই বিষয়টা নিয়ে তেমন কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি। উন্মুক্ত নালাগুলো এখনও অরক্ষিত। কোনো ধরনের স্ল্যাব কিংবা নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়া হয়নি।

নেই কোনো পরিকল্পনা। চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষ এতে ক্ষুব্ধ। এ অঞ্চলের মানুষের গলার কাঁটা হয়ে আছে এই সমস্যাটি। অথচ বছরের পর বছর এই একটা সমস্যার সমাধান করে দেবে বলে চট্টগ্রামের মানুষের সাথে ছলনা করে যাচ্ছে কর্তৃপক্ষগুলো। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বর্ষার সময় একটি আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে মাত্র এটি। বাকি সারা বছর এই বিষয়টি নিয়ে আর কারও কোনো মাথাব্যথা নাই। বর্ষা আসলেই শুধু এই বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, টকশো হয়, মানুষের মৃত্যু হয়।

কিন্তু এভাবে আর কত দিন? আর কত দিন শব্দটাও আসলে ভুল, আর কতকাল বলতে হয়। এত এত বছর যাবৎ এই এক সমস্যা নিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ বসবাস করছে, কী পরিমাণ যন্ত্রণা নিয়ে একবার ভেবে দেখুন। সীমাহীন এই কষ্ট থেকে চট্টগ্রামের মানুষ বাঁচতে চায়, মুক্তি চায়। তবুও প্রশ্ন থেকেই যায়, কবে মিলবে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি?

আজহার মাহমুদ
শিক্ষার্থী, বিবিএ-অনার্স, হিসাববিজ্ঞান বিভাগ (৪র্থ বর্ষ)
ওমরগনি এম ই এস বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, চট্টগ্রাম
ইমেইল: [email protected]