শিক্ষাবিদ ও মনোবিজ্ঞানীদের কাছে শিশু নিয়ে কৌতূহলের অন্ত নেই। কীভাবে একজন শিশুর শিক্ষার ভিত মজবুত করা যায়। কীভাবে শিশুর কার্যকরী শিখন নিশ্চিত করা যায়। কোন পদ্ধতিতে ও কী শেখালে শিশুর শিখন ভালো হবে। প্রাচীনকাল থেকে আজ পর্যন্ত শিক্ষাবিদদের কাছে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
জন্মের পর মা-বাবা ও পরিবার-পরিজন শিশুর শিক্ষা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। শিশুর বুদ্ধি ধীরে ধীরে বিকশিত হতে থাকে। শিশু কথা বলতে শেখে, কোনো কিছু ধরতে শেখে, খেলতে শেখে। এগুলো যতটা চারপাশের মানুষ তাকে শেখায় তার চেয়ে সে নিজেই স্বতঃস্ফূর্তভাবে শেখে। এগুলো শেখা একদিনের বিষয় নয়। শিশু চারপাশের সবকিছু দেখে, অনুকরণ করে এবং শেখে।
শিশু যখন একটু বড় হয়, দেখা যায় যে মা-বাবা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিশুর শিখনের জন্য শিক্ষাকে তার ওপর চাপিয়ে দিতে চান। খুব পরিচিত একটি কথা আছে, সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত। স্বশিক্ষিত লোক বলতে আমি মনে করি এমন ব্যক্তিকে যিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও নিজ আগ্রহে বিদ্যা অর্জন করেন এবং অর্জিত বিদ্যাকে বাস্তব জীবনে সানন্দে কাজে লাগান।
স্বশিক্ষা নিয়ে কথা বলতে গেলে আমার প্রথম যে শব্দটি মাথায় আসে সেটি হলো স্ব-শিখন। স্বশিখনের মাধ্যমে ব্যক্তি নিজ উদ্যোগে স্বতঃস্ফূর্তভাবে শিখতে পছন্দ করে। শিশুর কার্যকরী শিখনের জন্য স্বশিখন সবচেয়ে ফলপ্রসূ পদ্ধতি। কারণ এই পদ্ধতিতে শিশু নিজ উদ্যোগে ও নিজ দায়িত্বে শেখে। এই শিখনের ফলে অর্জিত বিদ্যা তার মাঝে দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এই বিদ্যাকে সে বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারে।
শিখন একটি জীবনব্যাপী ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। একজন ব্যক্তি জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত স্বশিখনের মাধ্যমে অনেক কিছু শেখে। শুধু পাঠ্যবই নয়, দৈনন্দিন জীবনের অনেক কাজ স্বশিখনের মাধ্যমে আমরা শিখি। শিশুকে স্বশিখনের অনুপ্রাণিত করতে হলে শিশুকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও প্রতিষ্ঠানের বাইরে এবং ঘরে শিক্ষামূলক কাজে অনুপ্রাণিত করতে হবে। শিক্ষা অর্জনে ও নতুন কিছু শিখতে তার ভেতরে তৃষ্ণা জাগাতে হবে। তাকে এমন এমন উদাহরণ ও গল্প শোনাতে হবে যাতে সে শিখতে চাই। তাকে প্রশ্ন করতে হবে ও প্রশ্ন করায় উৎসাহিত করতে হবে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও পাঠ্যবই অনেক সময় শিশুদের মধ্যে একঘেয়েমি সৃষ্টি করে। তাই দলীয় কাজ, প্রতিযোগিতা এবং নিত্য নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে শিশুকে স্বশিখনে উৎসাহিত করতে হবে। পড়াশোনা জোর করে চাপিয়ে দেওয়া জিনিস নয়। জোর করে শিশুর ওপর বিদ্যা চাপিয়ে দিলে সে বিদ্যা শিশুর বাস্তব জীবনে তেমন কাজে লাগবে না। তাই শিশুর ভেতরে বিদ্যার্জনের জন্য ভালো লাগা ও দায়িত্ববোধ সৃষ্টি করতে হবে। যাতে সে নিজ উদ্যোগে শিখতে, প্রশ্ন করতে এবং অর্জিত জ্ঞান কাজে লাগাতে আগ্রহী হয়।
খালিদ মোশারফ
ইনস্ট্রাক্টর, পিটিআই, কুষ্টিয়া