চট্টগ্রাম বইমেলায় যেসব অনুষঙ্গ থাকা প্রয়োজন

চট্টগ্রাম বইমেলা

বাংলাদেশের বইমেলা জনসাধারণের জন্য অনেক জনপ্রিয় একটি স্থান। যদিও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো বইমেলার তেমন আয়োজন দেখা যায় না আর বইয়ের সুঘ্রাণও তাই ততটা সমাদৃত হয়নি। বিভাগ, জেলা ও উপজেলাকেন্দ্রিক বর্তমানে বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে বিশেষ করে বাঙালির ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিতেই। এ মাসজুড়ে আমাদের দেশে বইমেলা বসে। মানুষের দারুণ উৎসাহ উদ্দীপনার জায়গা হলো এই বইমেলা।

ঢাকায় বাংলা একাডেমি আয়োজিত বিশাল বইমেলার সৌন্দর্য এবং মননদীপ্ত মানুষের আনাগোনা দেখে সত্যি মন ভরে যায়। বইমেলায় মোড়ক উন্মোচন একটি বড় কার্য সম্পাদিত হয়। প্রতিদিন লেখকদের নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়। সঙ্গে চলে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গানের আসর। সব মিলিয়ে বেশ ভালোই সময় কাটে বইমেলায় গেলে। কিন্তু বইমেলায় গেলে অনেক অনুষঙ্গ কম দেখতে পাই যা থাকলে হয়তো বইমেলা এবং বইয়ের সঙ্গে পরম আত্মীয়ের মেলায় পরিণত হতো।

বিজ্ঞানী টমাস আলভা এডিসন বলেছেন, ‘জ্ঞানের প্রথম ধাপ হচ্ছে আমরা যে মূর্খ তা জানা।’ কথাটি গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা শৈশবে যখন কথা বলতে শিখি তখনই তা প্রথম উপলব্ধি হয়। মূর্খ বলেই বারবার চেষ্টা করা লাগে জ্ঞানে গরিমায় নিজেকে আয়ত্তে আনতে ও সমৃদ্ধ করতে।

একজন পাঠক যখন বই নাড়াচাড়া করেন তখন তার উৎসুক মন তা পড়তে চায় কিন্তু সেই দীর্ঘ সুযোগ, পড়ে বই কেনার সুযোগ বইমেলায় থাকে না। এরপর প্রচণ্ড ভিড়ে বই মনমতো কেনাও বেশ কঠিন বিষয়। অনেকেই লেখক নামজাদা দেখে বই কেনেন। আবার অনেকেই খুঁটে খুঁটে বই দেখে পড়ে বই কেনেন। এ সব সমঝদার পাঠকদের জন্য যদি বসে পড়ার মতো বড়সড় ব্যবস্থা করা যেত তাহলে বই বেচাকেনা আরো বাড়ত বলে মনে করেন বিজ্ঞজনরা। বইমেলা হোক একটা লাইব্রেরির মতো।যেখানেই যে স্টলে যাবে পাঠক একটু সময় নিয়ে বইটি পড়ে যাচাই বাছাই করতে পারে মতো সুযোগ দেওয়া উচিত। চট্টগ্রামের বইমেলায় বিদ্যানন্দের স্টলটি খুব ভালো লেগেছে। কারণ সেখানে বসে বই পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

এবার চট্টগ্রাম বইমেলায় শিশুদের জন্য মিনি পার্কের ব্যবস্থা করা হয়েছে যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। শিশুরা একটু নিজেদের মতো সময় কাটাতে চায় সব সময়। বইয়ের মর্ম ওরা কতটুকুই বা বুঝে। পাঠকেরা শিশুদের ওইদিকে ব্যস্ত রেখে নিজেদের পছন্দ মতো বই কিনতে সহজ হয় আর শিশুরাও বেশ আনন্দ পায়।

বইমেলার সবচেয়ে বড় কষ্টদায়ক অভিজ্ঞতা হলো শৌচাগারের চরম অব্যবস্থাপনা। এটি আরো বহুগুণে উন্নত করা উচিত। বইমেলা বছরে বছরে স্থান পরিবর্তন না করে নির্দিষ্ট একটি জায়গায় হলে তবে স্থায়ীভাবে পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করা যেতে পারে।

বইমেলায় সবচেয়ে বেশি কোণঠাসা হয়ে থাকেন নতুন লেখকগণ। তাঁদের সঙ্গে নবীন প্রবীণ লেখকদের পরিচয় পর্ব ও বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ সেশন চালু করা বইমেলা চলাকালে খুবই প্রয়োজন। কারণ বইমেলা হলো সব সৃষ্টিশীল লেখকের মিলনস্থল। তাই সহজেই সেই প্রশিক্ষণের কাজটি অনায়াসে বইমেলায় ব্যবস্থা করা যায়।

এবার চট্টগ্রাম বইমেলায় সন্ধ্যায় গিয়ে দেখলাম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলছে। গান, কবিতা ও নাচের আয়োজন দেখে উপস্থিত দর্শক ও পাঠকেরা বেশ আনন্দিত। এত সুন্দর আয়োজন মন ভালো না হয়ে যাবে কোথায়? কিন্তু দীর্ঘক্ষণ গান শোনা বা বসলে মাথা দেখি ব্যথায় টনটন করছে। এতটাই শব্দদূষণের কবলে পড়েছে বইমেলা। এসব যেন কেউ দেখার নেই। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ বইমেলায় দর্শনার্থী কিংবা পাঠকের জন্য শান্তিময় রাখার চেষ্টা করবেন। বইমেলা মানেই জ্ঞানের মেলা। কোনো চিৎকার চেঁচামেচির মেলা নয় মোটেও। তাই এখানে সহনীয় পর্যায়ে সাউন্ড থাকা উচিত।

আমাদের চট্টগ্রামের বইমেলা বসেছে সিআরবির শিরীষতলায়। পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকলেও অনিন্দ্য সুন্দর এই জায়গাটিতে বইমেলার জন্য উপযুক্ত জায়গা মনে করছেন অনেকে। এখানে প্রচুর বসার জায়গা আছে, খাওয়ার দাওয়ার ব্যবস্থা আছে দেখলাম। পাশাপাশি মাটির তৈজসপত্রও বিক্রি হচ্ছে। এক কথায় দারুণ উপভোগ্য হচ্ছে আমাদের চট্টগ্রামের বইমেলা। কিন্তু এতেও বেশ কিছু অসংগতি লক্ষ্য করা যায়। যা খুবই বিরক্তির কারণ হয়েছে পাঠক ও দর্শনার্থীদের কাছে। লেখকদের বসার জায়গার সুন্দর ব্যবস্থাপনা থাকা দরকার। মিডিয়ায় নতুন পুরোনো লেখকদের বই নিয়ে আলোচনা বা টক শো হওয়া দরকার যা নতুন প্রজন্ম বই লেখা ও পড়াতে আগ্রহী হয়। পাঠক সাধারণ বই কিনবে যদি লেখক সমাগম বইমেলায় বাড়ে। পাঠকের মনে লেখকগণ একেকজন অনুপ্রেরণার মানুষ। আসুন বইমেলায় যায় এবং সাধ্যমতো ভালো বই কিনি। আমাদের সন্তানদের হাতে মোবাইল নয় একটি ভালো বই তার হাতে তুলে দিই। মোবাইলের আসক্তি কমুক,কোমল হাতের স্পর্শে বর্ণমালা সতেজ মেধা দীপ্ত  প্রাণ ফিরে পাবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এটাই কামনা করি।

পারভীন আকতার
শিক্ষক
চট্টগ্রাম