প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার রোগ সহজে ধরা পড়ে না। যখন ধরা পড়ে, তখন অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। কোষগুলো ততক্ষণে একে অন্যকে আক্রান্ত করে ফেলে। আমাদের দেশে বাজারের সকল সমস্যাগুলো ক্যানসারে আক্রান্ত কোষের মতো একটি আরেকটির সাথে সম্পর্কিত। আক্রান্ত কোষগুলোর আভিজাত্য বাড়তে বাড়তে এতটাই বিস্তৃত হয়েছে যে, ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণকারী সর্বোচ্চ সংস্থাগুলোও লাগাম টানতে পারছে না।
অসাধু ব্যবসায়ীরা খুবই দক্ষতার সাথে একের পর এক পণ্যে দাম বাড়িয়ে বাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নিচ্ছে। সবক্ষেত্রেই রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে দায়ী করাটা সেই সুবিধাবাদী দলের কাজ। পণ্যের দাম কিছুটা বাড়লেও অস্বাভাবিক হতে পারে না। বাজারে ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের তথ্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছেও পরিষ্কার। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না, সেটিই প্রশ্ন।
বাজারে চাহিদার বিপরীতে জোগান কমে যাচ্ছে নাকি কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে— তাও বিবেচনার বিষয়। আমাদের অনেক বড় দুর্বলতা হলো, আমদানি ও রপ্তানি বহুমুখী না। একই ধাঁচ, একই গতি। কূটনৈতিকভাবে নির্ভরশীলতা কাটাতে না পারলে আমরা নির্দিষ্ট বাজারের বাইরে কোনো বাজার তৈরি করতে পারবো না। উদাহরণস্বরূপ, জাপান আমাদের কাছ থেকে পোশাক কিনছে বলে তারা পোশাক তৈরি করতে চাইলে পারবে না, এমনটা নয়। তার পরিবর্তে তারা বানাচ্ছে মেশিন। আমরা মেশিন আমদানি করছি চড়া দামে। পোশাক খাতে আমরা তাদের কাছ থেকে যে আয় করছি, যন্ত্রাংশ বিক্রি করে তার চেয়ে বেশি অর্থ তারা আমাদের কাছ থেকে নিয়ে যাচ্ছে। কস্ট বেনিফিটে স্পষ্ট, আমাদের সক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। ব্যবসায়ীরা ছোট্ট কিছু অংশকে নিজের করতে গিয়ে বড় ধরনের বাজার তৈরি করার দিকে মনোযোগী হতে পারছে না । ফলে একমুখী বাজারেই বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে ।
এফবিসিসিআই’র চেয়ারম্যান কিছুদিন আগে নিত্যপণ্যের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় সভা করলেন রমজান উপলক্ষে। ব্যবসায়ীরা সাফ জানিয়ে দিলেন এলসি সংকট সমাধান না হলে, শুল্ক না কমলে চিনির দাম কমানো সম্ভব নয়। এফবিসিসিআই চেয়ারম্যান ভদ্রলোক অনেকটাই আশাহত হলেন। শেষমেশ ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করে বললেন, আমরা আশা করি রমজানে নিত্য পণ্যের দাম কমানো যাবে । তিনি জোড় গলায় বলতে পারেননি, কমাতেই হবে ।
গত ১২ বছরে কোটিপতি ব্যাংক হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ৩ গুণ। করোনার সময়েও এক শ্রেণির মানুষ টাকার পাহাড় গড়েছেন। সমাজে এক শ্রেণির মানুষ কোটিপতি হচ্ছে, আমানত বাড়াচ্ছে এবং আরেক শ্রেণির মানুষ না খেয়ে জীবনযাপন করছে — এটি সরাসরি অর্থনৈতিক বৈষম্য। এতে সামাজিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হয় , অরাজকতা তৈরি হয় ।
ব্যবসায়ী নেতারাই বলছেন, সব পণ্য দ্রব্যই মজুত আছে, নাটক চলছে কৃত্রিম সংকটের। কী ভয়ানক কথা! এই নাটকের পরিচালক কে তাহলে? এর উত্তর আমারও জানা নেই। শুধু নাম শুনেছি ‘সিন্ডিকেট’। বাজারের অব্যবস্থাপনা, কৃত্রিম সংকট তৈরির পরিচালককে খুঁজে বের করা প্রয়োজন। সরকার চাইলেই পারবে। সে ক্ষেত্রে সরকারকে প্রভাবমুক্ত থাকতে হবে ।
প্রয়োজন স্বচ্ছতা, জবাবদিহি নিশ্চিত করা, সুশাসন, শক্তিশালী মনিটরিং সেল বা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রত্যক্ষ ও বাস্তবমুখী প্রয়োগ। এক পক্ষ অর্থের পাহাড় বানাবে, আরেক পক্ষের সংসারে চাল থাকবে না— এমনটা চলতে থাকলে সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার কোনো পথই খোলা থাকবে না।
মো. খশরু আহসান
শিক্ষার্থী, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, ঢাকা