‘পাসপোর্ট করতে চাইলে এখন সবাই আমাকে খোঁজে’

পাসপোর্ট অফিস মানেই দালালের দৌরাত্ম্য। এমন ভ্রান্ত ধারণা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। কেননা বিনা হয়রানি ও অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে আনতে সবার আগে নাগরিক সচেতনতা দরকার।

সম্প্রতি পাসপোর্ট গ্রাহকের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি দালালের চক্রান্তও ভিন্ন রূপ নিচ্ছে। মনে রাখতে হবে, যত ঝামেলা অফিসের বাইরে। ধারণা করা হয়, পাসপোর্ট খাত দেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত সেবা খাতগুলোর অন্যতম। কিন্তু এখানে নাগরিক সচেতনতার অভাবও আছে।

আমরা নিজেরাই ধরে নিয়েছি পাসপোর্ট অফিস মানেই হয়রানি, টাকা ও ভোগান্তির জায়গা। সেসবের অস্তিত্ব থাকলেও আপনাকে হতে হবে সচেতন নাগরিক। দালাল না ধরেই বা হয়রানি এড়িয়েই করতে পারবেন পাসপোর্ট।

সাধারণত বিভিন্ন গ্রাম থেকে সাধারণ লোকজন পাসপোর্ট করাতে আসেন জেলা শহরে। তাঁদের বেশির ভাগই পাসপোর্ট তৈরির কার্যক্রম সম্পর্কে ন্যূনতম অবগত। পাসপোর্ট করাতে কী কী কাগজ লাগে বা কী করতে হয়, তা তাঁদের কম জানা।

এ সুযোগটিই কাজে লাগিয়ে সংঘবদ্ধ দালাল চক্র এসব মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে অতিরিক্ত টাকা। বলা বাহুল্য, দেশের জটিল কাজের অফিসগুলোতে দালালের দৌরাত্ম্য বেশি থাকার একমাত্র কারণ অসচেতনতা। এসব অসচেতন মানুষ এখানে এসেই হুমড়ি খান। দেশ যতই আধুনিক হচ্ছে, সাধারণ মানুষের দালালের শরণাপন্ন হওয়া ততই বাড়ছে। এটার জন্য আমরাই দায়ী।

দশ বছর মেয়াদে পাসপোর্ট করাতে সরকারি খরচ যেখানে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, বেশির ভাগ মানুষ পাসপোর্ট করতে সেখানে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ করেও হয়রানিমুক্ত নয়। এর একমাত্র কারণ অসচেতনতা। সঠিক পন্থায় সঠিক কাগজ দিয়ে পাসপোর্ট করলে ৫ হাজার ৭৫০ টাকাই যথেষ্ট।

সঠিক নিয়মে পাসপোর্ট করার জন্য দরকার হয় নাগরিক সনদ, নিজের এক কপি ছবি, ছাত্র হলে সার্টিফিকেট, মা-বাবাসহ নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি। যেকোনো বিশ্বস্ত কম্পিউটার দোকান থেকে আবেদন করার সময় অন্যান্য অপশনগুলোও পূরণ করতে হবে; কেননা অনেক সময় সেই অপশন নিয়ে অফিসে ঝামেলা পোহাতে হয়।

তা ছাড়া পাসপোর্ট বিষয়ে ইউটিউবে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল দেখে অথবা বিশ্বস্ত কারও থেকে সঠিক ধারণা নেওয়া যেতে পারে। ফলে হয়রানির জায়গাগুলোতে হোঁচট খাওয়ার ভয় থাকবে না।

নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমি অন্তত ৫০টির বেশি পাসপোর্ট করিয়েছি প্রতিটি মাত্র ৫ হাজার ৭৫০ টাকায়। এখন পর্যন্ত আমার কোনো কাজে ঝামেলা হয়নি। মানুষকে হয়রানি থেকে বাঁচাতে সব সময় এগিয়ে আসি। এ জন্য এলাকা থেকে পাসপোর্ট করতে আসা লোকজন সবার আগে আমার খোঁজ নেন। ফলে এ বিষয়ে আমি পুরোপুরি অভিজ্ঞ।

বুঝে ওঠার শুরুতে ছোট ভাইয়ের পাসপোর্ট করার বিষয়ে একজনের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। বিভিন্ন কথার ছলে আমার কাছ থেকে তিনি ১৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছিলেন; অথচ খরচ হয়েছে সব মিলিয়ে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা এবং আবেদনের জন্য অতিরিক্ত ২০০ টাকা। এভাবেই সাধারণ মানুষকে বোকা বানানো হচ্ছে। আমরা নিজেরাই যদি সচেতন হতে পারি, তাহলে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে হয়রানি কেনার কী দরকার? আমাদের কাজ আমরাই করতে পারব।

শুধু পাসপোর্ট অফিস নয়, প্রতিটি কাজে সবার আগে জ্ঞান আহরণ করা দরকার। তবেই নিজের কাজ নিজে করতে পারার সাহস তৈরি হবে। আরও একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, ছোট ভাইয়ের করোনার টিকা সনদ ডাউনলোড হচ্ছে না। কারণ, মুঠোফোন নম্বর অজানা। উপায় না পেয়ে একজন দোকানদারের পরামর্শ নিতে গিয়েছি। তিনি ৩ হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। কিন্তু সুরক্ষা অফিসে গিয়ে বিনা টাকায় ও সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করে নেওয়া যায়। অজানা বিষয়ে এভাবেই আমরা নিয়মিত প্রতারিত হচ্ছি। এ জন্য এসব হয়রানির একটাই সমাধান নিজেদের সচেতন হওয়া।

তা ছাড়া সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানি, ভোগান্তি ও দুর্নীতিমুক্তভাবে পাসপোর্ট পেতে পারে, সে জন্য প্রতিটি পাসপোর্ট অফিসে অভিযান পরিচালনা, সচেতনতামূলক ব্যবস্থা ও নিয়মিত তদারকি প্রয়োজন। ফলে সাধারণ মানুষের হয়রানি কমে আসবে ও ধীরে ধীরে নাগরিক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে।

এস এম জসিম

শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গোপালগঞ্জ