টেকনাফ নেচার পার্ক পুনরায় চালু করা হোক

টেকনাফ গেম রিজার্ভ বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর
ছবি: সংগৃহীত

টেকনাফ গেম রিজার্ভ বাংলাদেশের একমাত্র গেম রিজার্ভ বন। এর আয়তন ১১৬১৫ হেক্টর। বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কয়েকটি স্থানে বন্য হাতির দেখা মেলে তার মধ্যে টেকনাফ গেম রিজার্ভ অন্যতম। বন্য এশীয় হাতির অভয়ারণ্য হিসাবে ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে এটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। টেকনাফ গেম রিজার্ভের অবস্থান কক্সবাজারের টেকনাফে। যথেষ্ট বিস্তীর্ণ এই গেম রিজার্ভে বন ছাড়াও আছে নাইট্যং পাহাড়, কুদুম গুহা, কুঠি পাহাড় প্রভৃতি আকর্ষণীয় স্থান। বনের উঁচু পাহাড় আর বঙ্গোপসাগরের মাঝে রয়েছে বিশাল গর্জন বন। আছে ১০০০ ফুট উঁচু তৈঙ্গা চূড়া। প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে আছে ফুল, ফল, বাহারি গাছ। সড়কপথে সহজ যোগাযোগের কারণে পর্যটকদের কাছে এটি একটি আকর্ষণীয় ভ্রমণ স্থান।

টেকনাফ গেম রিজার্ভ বন জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এবং এই বনের জীববৈচিত্র্যকে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বাধিক বলে ধারণা করা হয়। এই বনে ২৯০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৫৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৮৬ প্রজাতির পাখি, ৫৬ প্রজাতির সরীসৃপ এবং ১৩ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের গাছের মধ্যে আছে চাপালিশ, তেলি গর্জন, জলপাই, হরগজা, আম চুন্দল, বুনো অশোক, জারুল প্রভৃতি। পাখির মধ্যে আছে ছোট কানাকুবো, নীলকান, বসন্তবাউরি, বড় হলদে ঝুঁটি কাঠকুড়ালী, এশীয় দাগি কুঁটি প্যাঁচা, কালাগলা টুনটুনি, লাল মৌটুসী ইত্যাদি।

টেকনাফ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে সাময়িকভাবে বিচরণকারী এশীয় হাতির দেখা পাওয়া যায়। যেটি বাংলাদেশের বুনো হাতির একটি বড় অংশ। এখানে বাস করা বাংলাদেশে বুনো মোট হাতির প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। এ ছাড়া বিলুপ্তপ্রায় রামকুত্তা, উল্লুক, সম্বর হরিণ, উড়ুক্কু কাঠবিড়ালি, শজারু প্রভৃতি প্রাণীরও দেখা মেলে।

দর্শনার্থীদের জীববৈচিত্র্য অবলোকনের লক্ষ্যে টেকনাফ গেম রিজার্ভে ২০০৯ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় টেকনাফ নেচার পার্ক। পার্কটির মূল ফটক মোচনী বনবিটের দমদমিয়া নামক স্থানে। অতি দুঃখের বিষয়, জীববৈচিত্র্য গবেষণার এই পার্কটি বর্তমানে অচল। এই পার্কটি অচল হওয়ার কারণে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, গবেষক ও পর্যটকদের জীববৈচিত্র্য দর্শনে অসুবিধা হচ্ছে।

তাই টেকনাফ গেম রিজার্ভে দায়িত্বরত আন্তর্জাতিক সংস্থা আইইউসিএন, জাতীয় বেসরকারি সংস্থা, পরিচালনা কমিটি এনএসিওএম এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি টেকনাফ নেচার পার্ক সংস্কার পুনরায় চালু করে গবেষণার সুযোগ সম্প্রচারিত করার একান্ত অনুরোধ রইল।

মাহবুব নেওয়াজ মুন্না
উন্নয়ন সংস্থা শেডের আইএনআই প্রকল্পে কর্মরত