ইউপি অফিসে একটি জন্মসনদ পেতে যে অভিজ্ঞতা...

গত ২৬ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম থানার অন্তর্গত জগন্নাথ ইউনিয়ন পরিষদের অফিসে গিয়ে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছি। নিজের জন্মসনদের ইংরেজি কপি বের করার জন্য বোর্ড অফিসে যাওয়া, যেটা মাত্র ৩০ মিনিটের কাজ। এই কাজের জন্য সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা ধরে তথাকথিত আমলাদের হয়রানি শিকার হতে হয়েছে। কারণ ছিল একটাই, আমি তথাকথিত সেই আমলার উদরপূর্তির জন্য পকেট ভারী করতে পারিনি। যার জন্য বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে দীর্ঘসূত্রতার শিকার হতে হয়েছে।

আমাকে বলা হলো, একটা জন্ম নিবন্ধন পেতে কমপক্ষে সাত দিন সময় লাগে অথচ আপনি সেটা এক ঘণ্টার মধ্যে পেয়ে যাবেন, তা তো সম্ভব না। অথচ, যার একটু পরিচিতি আছে। একটু রাজনৈতিক প্রভাব আছে। সামাজিক প্রতিপত্তি আছে। এমন কেউ এসে বলছে তাঁর কাজ সঙ্গে সঙ্গেই হয়ে যাচ্ছে।

আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জন্য সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ওই ৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে আমার মতো হয়রানির শিকার হওয়া মানুষ যেমন দেখতে পেয়েছি তেমনি প্রভাব প্রতিপত্তি এবং অর্থকরীর কল্যাণে ৩০ মিনিটের কাজ তিন মিনিটে হতেও দেখেছি। আড়াই ঘণ্টা পর আমি আবার বলাতে, বলা হলো: চেয়ারম্যান আসেননি। তাঁর স্বাক্ষর ছাড়া আপনাকে দিতে পারব না। অথচ, সেই আড়াই ঘণ্টার মধ্যেই আমার সামনে তিন থেকে চারটা সনদের ইংরেজি কপি তিন-চারজন ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়েছে।

বুঝতে পারলাম না, তাদের মধ্যে আমার মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? পরবর্তীতে সেবা পাওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানতে পারলাম। একজনকে ইউনিয়ন মেম্বার রেফার করেছেন। অন্যজন ওই আমলার নিকট আত্মীয়। আর অপরজন মোটামুটি খুচরা কিছু পয়সার মালিক। তাঁরা আমাকে পরামর্শ দেন, কিছু টাকা দিয়ে দেন, আপনার কাজ‌ও হয়ে যাবে।

এই হচ্ছে আমাদের সমাজ ব্যবস্থার চিত্র। সরকারি কর্মকর্তাদের লালফিতার দৌরাত্ম্যের অবস্থা। কীভাবে আমরা অসাধু কর্মকর্তাদের হাত থেকে সাধারণ জনগণকে রক্ষা করব? কীভাবে জনগণের এই হয়রানি মোচন করব? কীভাবে জনগণের এই কষ্ট লাঘব করব? এই সমস্যা সমাধান কল্পে অচিরেই দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি এবং প্রয়োজনে যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য জোর আবেদন জানাচ্ছি।

মো. নেছার উদ্দিন চৌধুরী
আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়