পরিযায়ী পাখিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করুন

শীতের সময় এ দেশে এসে শিকারীদের শিকার হচ্ছে পরিযায়ী পাখিফাইল ছবি

ষড়্ঋতুর আবর্তনচক্রে হেমন্তের পরই শীতের আগমন শুরু হয়। শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু হলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমাদের দেশে পরিযায়ী পাখির আগমন শুরু হয়।

এসব পাখি সাইবেরিয়া, উত্তর মেরু, এশিয়া ও ইউরোপের কিছু জায়গা এবং হিমালয়ের আশপাশের স্থানে বসবাস করে। শীতকালে এসব জায়গায় তুষারপাতের কারণে তীব্র খাদ্যসংকটে তাদের বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। বেঁচে থাকার তাগিদে এসব পাখি বাংলাদেশসহ বিশ্বের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলগুলোর দিকে আশ্রয় নেয়।

আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশের সীমানায় ২৮টি মুক্ত অভয়ারণ্য রয়েছে। সাধারণত অক্টোবরের শেষ এবং নভেম্বরের শুরুর দিকে এসব পাখি আমাদের দেশে আসতে শুরু করে। আমাদের দেশের হাওর-বাঁওড়, মুক্ত জলাশয় ও ঝোপঝাড় এদের কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে। বালিহাঁস, পাতিহাঁস, গাঙচিল, ডাহুক, পানকৌড়িসহ তিন শতাধিক প্রজাতির পাখির আগমন হয়।

শীত শেষে এরা আবার অতিথির মতো চলে গেলেও এই ক্ষণিকের অতিথিদের সঙ্গে আমরা অতিথিসুলভ আচরণ করি না। হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এসব পাখি আমাদের কাছে বেঁচে থাকার তাগিদে এলেও আমরা তাদের শিকারে প্রয়োগ করি বিভিন্ন কৌশল। বড়শি ফেলে, ফাঁদ পেতে, বন্দুকের সাহায্যে, চোখে লেজার রশ্মি ফেলে প্রায়ই এসব পাখি শিকার করা হয়।

প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যক্তি অনবরত এসব পাখি শিকার করে যাচ্ছে। তা ছাড়া বাজারেও এসব পাখির বেশ দাম রয়েছে। তাই বিক্রি করতেও খুব একটা বেগ পেতে হয় না।

পাখি শিকার দণ্ডনীয় ফৌজদারি অপরাধ। ১৯৭৪ সালের বন্য প্রাণী রক্ষা আইন এবং ২০১২ সালের বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে দণ্ডের বিধান রয়েছে।

অনবরত পাখি শিকারের কারণে দিন দিন এসব পাখির আগমন ও সংখ্যা আমাদের দেশে কমে যাচ্ছে, এদের অনেক প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নির্বিচার পাখি শিকারের কারণে এদের প্রায় ১৩০টি প্রজাতি প্রকৃতি থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। পাখি শিকারে একদিকে যেমন জীববৈচিত্র্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে ফসলি জমিতে পোকার আক্রমণ বেড়েই চলেছে।

পাখি প্রকৃতির অলংকার। অতিথি পাখি একদিকে যেমন আমাদের দেশের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করছে, ঠিক তেমনি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অভাবনীয় অবদান রাখছে।

পাখি শিকারের বিরুদ্ধে আইন থাকলেও বাস্তবে আইনের যথাযথ প্রয়োগ দেখা যায় না। অতিথি পাখি শিকার রোধে প্রচলিত আইন জোরদার করা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।

পরিযায়ী পাখি আমাদের পরম বন্ধু। প্রকৃতি ও পরিবেশের সুরক্ষায় অবিলম্বে অতিথি পাখি শিকার বন্ধ করতে হবে, অন্যথায় জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে।

রিয়াহীন ফারহানা
শিক্ষার্থী
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়