আরাফাতনগরে খেলার মাঠ সংরক্ষণ কেন জরুরি

আরাফাতনগরের খেলার মাঠছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ধর্মগঞ্জের আরাফাত নগরের একমাত্র খেলার মাঠটি বারবার দখলে চলে যাচ্ছে। এলাকার তরুণ ও যুব প্রজন্মের একটা অংশ নানা চেষ্টার মাধ্যমে আবার মাঠটা ফিরিয়ে এনেছে। এখন যদি এলাকার দায়িত্বশীল ব্যক্তিগণ এ মাঠ সংরক্ষণে এগিয়ে না আসেন আর একসময় যদি এ এলাকায় কোনো খেলার মাঠ না থাকে তাহলে আপনাদের কোমলমতী সন্তানরা কোথায় যাবে? তাদের ভবিষ্যতে কী পরিণতি হবে? অথবা ভবিষ্যতে সমাজে কতটুকু প্রভাব ফেলবে এ যান্ত্রিক প্রজন্মটা ?

আপনাদের এ কোমলমতী সন্তানরা, যে বয়সে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করার কথা, অথচ সেই বয়সে এলাকায় তাঁর জন্য একটা খেলার মাঠ নেই। সে প্রতিদিন বই-খাতা ভারী ভারী ব্যাগ নিয়ে স্কুলে যায় । তার পড়তে হয় কঠিন সব ইংরেজি আর কষতে হয় জটিল সব অঙ্ক। তারপর বাসায় ফিরে মোবাইল গেমে অথবা পশ্চিমা ধাঁচের কোন কার্টুন তারপর রাতে আবার পড়ালেখা, সবশেষে ঘুমতে যাওয়ার আগে মোবাইল বিনোদন নেওয়া। এভাবেই চার দেওয়ালের মধ্যে এক অলিখিত যান্ত্রিক রুটিনে আবদ্ধ হয়ে যাচ্ছে তারা।

কিন্তু একটা সময় পরে তাদের এমন অবস্থা হয়, তারা যান্ত্রিক জীবন থেকে মুক্তি নেওয়ার জন্য টিকটক, ফেসবুক, কখনো পর্নোগ্রাফি দেখে ক্লান্ত ও হতাশাগ্রস্ত। সুষ্ঠু বিনোদনের অভাবে এমন সব কনটেন্টের দিকে তারা ঝুঁকে পড়ে, এর ফলে মাদকদ্রব্য গ্রহণ, চুরি, ছিনতাইসহ ধর্ষণের মতো ভয়ানক অপরাধে সে জড়িয়ে পড়ে। কিন্তু  তাদের এ পরিণতির জন্য দায়ী আসলে কে ছিল ?

আপনাদের কোমলমতী শিশুদের খেলার মাঠ সংরক্ষণ কতটুকু জরুরি তা স্বাধীন দেশের বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমদ একবার তার বক্তৃতায় বলেছিলেন, ‘এই যে খেলার মাঠ সব দখল হয়ে যাচ্ছে, ছেলেরা সব কই যাবে? রাস্তা ঘাটে ঘুরবে, অকারণে বাজারে যাবে, মানুষের পকেটে হাত ঢুকাবে।’ আজ আমরা সেই বঙ্গতাজের কথা হারে হারে টের পাচ্ছি। উঠতি বয়সী ছেলেদের অনেকে আজকাল মাদক সেবনের জন্য বাবার পকেট থেকে টাকা চুরি করছে, পথে-ঘাটে উত্যক্ত করছে মেয়েদের, জড়িয়ে পড়ছে আরও নানা অপরাধে। তাদের যাওয়ার জায়গা নেই।

মুক্ত বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতো উন্মুক্ত জায়গা তাদের নেই। সুস্থ বিনোদন ও খেলাধুলার জন্য মাঠ নেই যাও একটা আছে সেটা নিয়ে চলছে দখলদারী। অথচ তাদের সুস্থ সংস্কৃতি চর্চা, শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য চাই একটা খেলার মাঠ।

এ কথা আপনাকে মানতেই হবে, আপনাদের কোমলমতী সন্তানদের দেহ, সুন্দর মন ও সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার জন্য খেলাধুলা আবশ্যক। খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের মধ্যে কর্মে উৎসাহ আনে, মনে আনন্দ পায় ও দেহে সজীবতার সঞ্চার ঘটায়। পুষ্টিকর খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত খেলাধুলার ফলে তাদের শরীরে রোগপ্রতিরোধের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া প্রকৃতির উন্মুক্ত প্রান্তরে খোলা আকাশের নিচে যে খেলাগুলো হয়, সেগুলো তাদের অধ্যবসায়ী ও শৃঙ্খলাবদ্ধ হতেও সাহায্য করে।

খেলাধুলার মাধ্যমে আপনার কোমলমতী সন্তানরা  দলবদ্ধভাবে কাজ করার মানসিকতা, নেতৃত্ব প্রদান, সহানুভূতি ও সহমর্মিতা বোধ পায়। এসব মানবিক মূল্যবোধ আপনার সন্তানকে একজন প্রকৃত মানুষ হতে সাহায্য করবে। তাছাড়া প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই সাফল্য, ব্যর্থতা, রাগ, অভিমান থাকে। আর খেলাধুলায় হার-জিত, সাফল্য-ব্যর্থতা তো অবশ্যম্ভাবী। হোঁচট খেয়ে পড়ে যাওয়ার পরও যে ঘুরে দাঁড়ানো যায় তা শেখা যায় প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলার মাধ্যমেই।

তাছাড়া খেলাধুলার মাধ্যমে আপনার কোমলমতী সন্তান প্রতিকূল পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে শেখে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলার মাধ্যমে চাপ নেওয়া ও কঠিন সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার শিক্ষাটাও পায় সে খেলাধুলার মাধ্যমেই। কিন্তু সে যদি খেলাধুলার জন্য কোনো জায়গা খুঁজে না পায় তাহলে সে একজন পরিপূর্ণ মানুষ হবে কীভাবে?

সর্বোপরি আরাফাত নগরে এ খেলার মাঠ সংরক্ষণ খুবই জরুরি। বারবার নানা পক্ষ মাঠটা দখল করেছে আমরা আবার ফিরিয়ে এনেছি। এখন যদি আপনারা এগিয়ে না আসেন তাহলে হয়তো আবার কেউ মাঠ দখলে নিয়ে যাবে। দিন শেষে যদি আপনাদের কোমলমতী সন্তানরা খেলাধুলা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে হয়তো তারা একসময় হবে মাদকাসক্ত, ইভটিজিআর অথবা অপরাধী পরিচয় বহন করবে। আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধ ভাবে মাঠ সংরক্ষণে এগিয়ে আসা।

সাকির আহমেদ
ঢাকা কলেজ, ঢাকা