সন্তানের আবদার মেটাতে মোটরসাইকেল নয়

মোটরসাইকেলপ্রতীকী ছবি

একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না। পৃথিবী জুড়ে সোনালি সকাল যেমন করে আগমন ঘটে, তেমনি ধূসর কালো অমাবস্যার রাতও অনেকের  জীবনে নেমে আসে। শৃঙ্খলাই সত্যিকারের জীবন, বিশৃঙ্খলা কিংবা অনিয়মিত জীবনযাপন, চলাফেরা, আচার আচরণ কারও জীবন সু-শোভিত করতে পারে না। বর্তমান সময়ে কিশোর, তরুণ কিংবা যুবক অনেকে কাছে পছন্দের জিনিস একটি সুন্দর ব্রান্ডের মোটরসাইকেল, সঙ্গে দামি স্মার্টফোন তো থাকা আবশ্যকীয়।

জীবন যেখানে যেমন,  বৃষ্টি কারও জন্য উপভোগ আবার কারও জন্য কষ্টের কারণ।  সবাই সবকিছু উপভোগ করতে পারে না। বর্তমান এ আধুনিক সমাজে  নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে  উচ্চবিত্ত  পরিবারে যারা জন্মগ্রহণ করেন, অনেকেই চান সন্তানের আবদার মিটাতে। কিন্তু অনেকে এটি ভাবেন না যে, আসলেই আমি সন্তানের আবদার মেটাচ্ছি কি? সন্তান মোটরসাইকেল কিনে দিতে বললে, তার আবদার মেটানোর জন্য সেটি কিনে দিচ্ছে তার পরিবার, কিন্তু এ মোটরসাইকেল কারও জীবনে অভিশাপ হয়ে আসে।

২০২৩ সালে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্যানুযায়ী পুরো দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটেছে দুই হাজার ৫৩২টি। নিহতের সংখ্যা দুই হাজার ৪৮৭ জন, আহত এক হাজার ৯৪৩ জন। নিহতদের মধ্যে ১ হাজার ৯০৯ জন অর্থাৎ ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশের বয়স ১৪ থেকে ৪৫ বছরের মধ্যে।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য আরও বলছে, ৩৬ দশমিক ২১ শতাংশ বা ৯১৭ টি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে বাইক অর্থাৎ মোটরসাইকেল এককভাবে দায়ী।

যারা মোটরসাইকেল চালান তাঁদের অনেকেরই নেই কোনো বৈধ লাইসেন্স। অতিরিক্ত গতি, ওভারটেক, ভ্লগ ভিডিও নির্মাণসহ নানা ধরনের কার্যকলাপের কারণে দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। দামি ব্রান্ডের মোটরসাইকেল হলে তো কথাই নেই, তাতে যেন সড়কের রাজা বনে যান অনেকে। অনেকে হারিয়ে যান স্বপ্নের পৃথিবীতে, ফলে সেই স্বপ্ন যে দুঃস্বপ্ন হয়ে আসতে পারে, সেই ভাবনা কেউ করে না।

সুতরাং অভিভাবক যারা আছেন, আপনাদের সন্তানদের তড়িঘড়ি করে বিনা প্রয়োজনে কখনো তার আবদার মেটানোর জন্য মোটরসাইকেল কিনে দেবেন না। যদি প্রয়োজন হয় তখন তাকে সুন্দরভাবে মোটরসাইকেল চালনার ক্ষতিকর দিক ও নিয়ম কানুন সম্পর্কে সচেতন করুন এবং বৈধ লাইসেন্স নিয়ে তারপর কিনে দিন। নতুবা আপনার সন্তান আপনার চোখের সামনে হারিয়ে যেতে পারে কিংবা সারাটা জীবন পঙ্গুত্ব বরণ করে গোটা পরিবারকেই হতাশার নিমজ্জিত করে ফেলবে। যা কোনোভাবেই কোনো পরিবারে কাঙ্ক্ষিত নয়।

মো. আব্দুল করিম গাজী

সাবেক শিক্ষার্থী, ফেনী সরকারি কলেজ।

উত্তর আনন্দপুর, ফুলগাজী, ফেনী