চন্দ্রাভিযানে ব্যস্ত বিশ্ব, তবে পৃথিবীর খেয়াল রাখছে কতটুকু?

ছোটবেলায় মায়ের মুখে শোনা, আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা, এ ছড়াটি কারও অজানা নয়। তবে চাঁদ মামা টিপ দিতে আসতে না পারলেও মানুষ এখন চাঁদের দেশে পৌঁছে গেছে, খুঁজে চলেছে চাঁদের বুকে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকার সম্ভাবনা। যা নিঃসন্দেহে বিশ্ববাসীর জন্য অত্যন্ত গৌরবের বিষয়। কিন্তু পৃথিবীর বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন গ্রহ বা উপগ্রহে প্রাণীর অস্তিত্ব টিকে থাকবে কি না, সেটা ভাবতে গিয়ে ইতিমধ্যে আমরা পৃথিবী নামক যে বাসযোগ্য একটি গ্রহ পেয়েছি, তার খেয়াল রাখতে ভুলে যাচ্ছি না তো?

চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ। পৃথিবীর জোয়ার-ভাটা, ঋতুবৈচিত্র্য, দিন–রাতের দৈর্ঘ্য ইত্যাদির সঙ্গে চাঁদ ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তাই তো ১৯৬৯ সালে যখন মানুষ প্রথম চাঁদে পা রাখে, তার পর থেকে যেন চাঁদ নিয়ে রহস্য আরও ঘোলা হয়ে চলছে; মানুষ পরিকল্পনা করছে চাঁদে বসতি করার। আর এ রহস্য উদ্‌ঘাটনেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ চালাচ্ছে চন্দ্রাভিযান।

এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও ভারত সফলভাবে চাঁদে পদার্পণ করতে সক্ষম হয়েছে। যা বিশ্ববাসী হিসেবে আমাদের জন্য সাফল্য ও গৌরবের বিষয়, কিন্তু আমাদের আরও গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে যে মানুষ কেন চাঁদে যাওয়ার প্রতি এত আগ্রহী? কী তার কারণ? এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, চাঁদে প্রাণের অস্তিত্ব টিকে থাকে কি না, অর্থাৎ জীব চাঁদে বসবাস করতে পারবে কি না তা উদ্‌ঘাটন করা, পাশাপাশি রয়েছে পানির অস্তিত্ব খোঁজা, বিভিন্ন খনিজের অস্তিত্ব খুঁজে বের করা ইত্যাদি।

এ ক্ষেত্রে আবারও মনে প্রশ্ন চলে আসে, কেন জীবের বেঁচে থাকার জন্য সর্বোত্তম আবহাওয়া ও পরিবেশ পৃথিবী নামক গ্রহটির থাকলেও আমরা পৃথিবীর বিকল্প গ্রহ ও উপগ্রহের কথা চিন্তা করছি। আজ থেকে ৪৫৪ কোটি বছর আগে সৃষ্টি হওয়া পৃথিবী তার তাপমাত্রা, আবহাওয়া, পানি ও অক্সিজেনের উপস্থিতিসহ বিভিন্ন কারণে জীবের বসবাসের জন্য সর্বোত্তম উপযোগী একমাত্র গ্রহ। কিন্তু বর্তমানে মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে ও গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর পৃথিবীর এ ভয়াবহ অবস্থার কথা চিন্তা করেই বিজ্ঞানীরা নতুন গ্রহ কিংবা উপগ্রহের সন্ধান চালাচ্ছেন।

ধরা যাক, চাঁদ কিংবা মঙ্গলে মানুষের বসবাস উপযোগী আবহাওয়া রয়েছে, তবে সেই আবহাওয়া কীভাবে পৃথিবীর মতো একটি অনুকূল পরিবেশে রূপান্তর করা যাবে, কত বছর লাগবে, তা–ও কিন্তু ভাবার বিষয়! তাই আমাদের উচিত ইতিমধ্যে পৃথিবী নামক যে গ্রহ আমরা পেয়েছি, সেটার অবহেলা না করা; পৃথিবী ধ্বংসের পর আমরা কোথায় গিয়ে বসবাস করব, তা চিন্তা করতে গিয়ে পৃথিবী ধ্বংসের অপেক্ষা করতে থাকলে আমাদের জন্য তা কতটা কল্যাণকর হবে?

এ ক্ষেত্রে অবিলম্বে আমাদের উচিত পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কাজ করা, যেন পৃথিবী থাকতে অন্য কোনো গ্রহের প্রতি আমাদের নির্ভরশীল হতে না হয়। বিভিন্ন উন্নত দেশ চন্দ্রাভিযান সফল করতে যে পরিমাণ গবেষণা ও শ্রম দিয়ে যাচ্ছে, তার বিন্দু পরিমাণও যদি পৃথিবীকে সুস্থ রাখতে কাজ করে, তাহলে আমাদের পৃথিবীকে ছেড়ে থাকার কথা চিন্তাও করতে হবে না।

নিঃসন্দেহে চন্দ্র কিংবা সূর্যাভিযান বিশ্ববাসীর জন্য গৌরবের বিষয়। তার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আমাদের পৃথিবীর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা। সর্বোপরি বিশ্বের সব দেশ পৃথিবীকে সুস্থ রাখতে কাজ করলে আমাদের এই গ্রহ আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।

কারিশমা ইরিন

শিক্ষার্থী, বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
ই-মেইল: [email protected]