পত্রিকায় সিনেমার বিজ্ঞাপনের দিনগুলো কোথায় হারাল

জোয়ার এলো সিনেমার পোস্টার
ছবি: সংগৃহীত

হাসিনা আপা ম্যাট্রিক পাস করেন ১৯৬০ খৃষ্টাব্দে, পিরোজপুর আরবান গার্লস হাইস্কুল থেকে। এখন সেই স্কুলের নাম পিরোজপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়। স্কুল কম্পাউন্ডে একটি পুকুর ছিল, ছিল শানবাঁধানো ঘাট। ঘাটে বসে হাসিনা আপারা গল্প করতেন দেখেছি, ভাসা–ভাসা মনে পড়ে। সেই পুকুরও আজ ভরাট।

হাসিনা আপা সেই যুগে একটি সিনেমা দেখে বেশ আলোচিত হয়েছিলেন। ছবিটির নাম ছিল ‘জোয়ার এলো’।

হাসিনা আপা দেখতে অনেকটা ‘জোয়ার এলো’ ছবির নায়িকা সুলতানা জামানের মতো ছিলেন। হাসিনা আপা ছিলেন পিরোজপুরের আজিজ মোক্তারের বড় মেয়ে। তিনি ছিলেন আমার বড় বোনের বান্ধবী ও ক্লাসমেট। বড় বোনের সঙ্গে মাঝেমধ্যে হাসিনা আপার বাসায় যেতাম। এখনো মনে পড়ে, হাসিনা আপা আমার বড় বোনের সঙ্গে কথায় কথায় বলেছিলেন, তিনি ‘জোয়ার এলো’ ছবিটি ২৫ বার দেখেছেন।

তাঁর বলা এ কথাটি তখনকার সময়ে মানুষের মুখে মুখে ফিরত।

ইরা টকিজে চলছিল ‘জোয়ার এলো’, দর্শকের সে কী ভিড়! যেন ঠাঁই নেই, ঠাঁই নেই ইরা টকিজে। জনতার ভিড়। সেই ভিড়ের মধ্যে আমাকে দেখতে পেলেন স্কুলের একজন শিক্ষক। পরদিন তিনি আমাকে পড়া ধরার সময় বললেন, ‘রঙিলা সেজেছ। হাসিনা আপার ভক্ত।’

এই রঙিলা বলার রহস্যটা হলো, ‘জোয়ার এলো’ ছবির একটি পর্দাকাঁপানো গান ছিল, ‘মনে যে লাগে এত রং, ও রঙিলা’। তখনকার দিনে ‘রঙিলা’ বলাটা যেন একধরনের কমন শব্দ হয়ে গিয়েছিল।

একবার সুলতানা জামানকে হাসিনা আপার কথা বলতেই তিনি বলেছিলেন, ‘নেক্সট টাইম হাসিনা আপাকে নিয়ে আসবেন।’

কিন্তু তা হলো কোথায়? সুলতানা জামান মারা গেছেন তা বহু বছর হয়ে গেছে। পিরোজপুরের হাসিনা আপাও আজ বেঁচে নেই।

মনে হয়, কত–না নিষ্ঠুর এই পৃথিবী। জগৎ মিথ্যা, মানুষ মিথ্যা!

পিরোজপুরে হাসিনা আপাদের বাসাটা ছিল সাধনা ঔষাধালয়ের পূর্ব দিকে, একটি কি দুটি বাসার পরে।

জোয়ার এলো সিনেমা মুক্তি পায় ১৯৬২ সালে। সেসময় দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার পাতায় প্রতিদিনই ‘জোয়ার এলো’ ছবির বিজ্ঞাপন থাকত। সেই বিজ্ঞাপন দেখে আমরা ছবির পরিচালক আবদুল জব্বার খান এবং ছবির শিল্পী সুলতানা জামান, আমিন, এফ করিম, রেখা, ইনাম আহমেদ, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ নামগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়ে উঠি।

পরে বহু বছর ধরে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার পাতায় পাতায় সিনেমার বিজ্ঞাপন দেখেছি। কিন্তু আজ দৈনিক ইত্তেফাক কেন, কোনো পত্রিকার পাতায়ই সিনেমার বিজ্ঞাপন দেখতে পাই না। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগতে পারে, বাংলাদেশে এখন আর কি সিনেমা তৈরি হয় না?


লিয়াকত হোসেন খোকন
রূপনগর, ঢাকা