বাণিজ্য বিভাগের পাঠ্যবই: চাকরির বাজারে কম অপ্রাসঙ্গিক?

বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থায় বাণিজ্য বিভাগ একটি জনপ্রিয় বিষয়। উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক স্তরে প্রতিবছর অসংখ্য শিক্ষার্থী এই বিষয়ে ভর্তি হন। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, বাণিজ্য বিভাগের পাঠ্যবই ও চাকরির বাজারের মধ্যে একটি বিরাট ব্যবধান রয়েছে। শিক্ষার্থীরা তাঁদের পাঠ্যবইয়ের যে জ্ঞান অর্জন করেন, তা বাস্তবে কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারেন না।

কারণগুলো যখন আপনি খুঁজতে যাবেন, এই অপ্রাসঙ্গিকতার বেশ কিছু বিষয় উপলব্ধি করতে পারবেন। তার মধ্যে—

পাঠ্যক্রমের অবচয়: বাণিজ্য বিভাগের পাঠ্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে বর্তমান বাজারের চাহিদা অনুসারে তা প্রাসঙ্গিক নয়।

বাস্তব অভিজ্ঞতার অভাব: পাঠ্যবইয়ে বাস্তব কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে গুরুত্ব দেওয়া হয় না।

শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের অভাব: বেশির ভাগ শিক্ষকের বাস্তব কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা না থাকায় তাঁরা শিক্ষার্থীদের বাজারের চাহিদা অনুসারে প্রস্তুত করতে পারেন না।

এই অপ্রাসঙ্গিকতার প্রভাবের কারণে শিক্ষার্থীরা চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়েন।

এখন প্রশ্ন, ব্যাংক, হিসাবরক্ষক, ম্যানেজার ইত্যাদি পদে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি এত অবহেলা কেন? নানাবিধ সমস্যার কারণে বাণিজ্য বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীদের একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে। তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাই তো এই সময়ে বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনার হার দিন দিন আরও কমতে শুরু করেছে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগে ঝুঁকছেন।

তাঁদের পক্ষে চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বাণিজ্য বিভাগ থেকে যাঁরা চাকরি পান, তাঁদের বেতন কম হয়। তাঁদের কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা প্রমাণ করতে অসুবিধা হয়।

এর বাইরে আপনি লক্ষ করবেন, যেসব ক্ষেত্রে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপর গুরুত্ব বেশি দেওয়া উচিত, কিন্তু বর্তমানে সেখানে অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন, ব্যাংক, হিসাবরক্ষক, ম্যানেজার ইত্যাদি পদে বাণিজ্য বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রতি এত অবহেলা কেন? নানাবিধ সমস্যার কারণে বাণিজ্য বিভাগের প্রতি শিক্ষার্থীদের একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে।

তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনা তৈরি হচ্ছে। তাই তো এই সময়ে বাণিজ্য বিভাগে পড়াশোনার হার দিন দিন আরও কমতে শুরু করেছে, বেশির ভাগ শিক্ষার্থী মানবিক ও বিজ্ঞান বিভাগে ঝুঁকছেন।

দেশের অর্থনীতি মূল অংশ হলো বাণিজ্য, যেখান থেকে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করে। কিন্তু সেই শিক্ষা ক্ষেত্রে বাণিজ্য বিভাগ অবহেলিত।

এই সমস্যা সমাধানে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা যেতে পারে-পাঠ্যক্রমের সংস্কার করতে হবে, বাজারের চাহিদা অনুসারে পাঠ্যক্রম নিয়মিত সংস্কার করা, বাস্তব অভিজ্ঞতার ওপর জোর দিতে হবে। এ ছাড়া পাঠ্যবইয়ে বাস্তব কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে গুরুত্ব দেওয়া। শিক্ষকদের বাজারের চাহিদা সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান করা। এর পাশাপাশি চাকরি পরীক্ষায় বাণিজ্য বিভাগের বই থেকে ন্যূনতম ১৫ থেকে ২০ মার্কের প্রশ্ন রাখা। এতে বাণিজ্য বিভাগের গুরুত্ব আরও বাড়বে ও মূল্যায়ন হবে।

বাণিজ্য বিভাগের পাঠ্যবই এবং চাকরির বাজারের মধ্যে ব্যবধান দূর করা জরুরি। শিক্ষার্থীদের বাস্তব কর্মক্ষেত্রের জন্য প্রস্তুত করতে এবং তাদের চাকরির বাজারে প্রতিযোগিতামূলক করে তুলতে উপরিউক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করা অপরিহার্য।

এই লেখার মাধ্যমে আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই এবং এই সমস্যা সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করি।

সৌরভ হালদার
শিক্ষার্থী
ব্যবস্থাপনা বিভাগ, স্নাতক (তৃতীয় বর্ষ)
সরকারি ব্রজলাল কলেজ, খুলনা।