কিন্তু এত বড় সংগঠনের এত বিপুল কর্মী বাহিনী মূল কাজটা আসলে কী করে? ছাত্রলীগের তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা আসলে কী করেন? দেখা যায়, দু–একটা মিছিল-মিটিং আর সভা-সমাবেশ করেন, কিন্তু এতে চাকরির বাজারের দক্ষতা কি অর্জন করতে পারেন ছাত্রলীগের কর্মীরা? খুবই নিবেদিত কর্মী হলে হয়তো রাজনীতিতে স্থায়ী হয়ে যেতে পারেন, কিন্তু একটা সাংগঠনিক ইউনিটে কজন এ রকম রাজনীতিতে স্থায়ী হতে পারেন?

ছাত্রলীগ শেষ করে কোনো সহযোগী সংগঠনে পদ পেতে গেলেও অনেক ক্ষেত্রে দৌড়ে পিছিয়ে পড়তে হয়। ইউনিট সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের গুরুত্ব বেশি। কতজন যোগ্য ইউনিট সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন? একটি ইউনিটের সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক হওয়ার মতো যোগ্য ১০/১৫/২০ জনও থাকেন। তাই বলে যাঁরা হতে পারেননি, যাঁরা পিছিয়ে ছিলেন, তাঁরা সারা জীবনই পিছিয়ে থাকবেন? কেন্দ্র, জেলা, উপজেলা ইউনিটের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক ছাড়া লাখ লাখ ছাত্রলীগ নেতা-কর্মী হারিয়ে যান সিস্টেমের কারণে। রাজনীতির কারণে অনেকে শিক্ষাদীক্ষা বিসর্জন দিয়ে বেকারত্বের খাতায় নাম লেখান। যুগ বদলেছে। ছাত্রলীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বেকারত্ব হাহাকার শুনতে আর ভালো লাগে না।

এখন প্রশ্ন আসে, এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কী? উপায় অনেক আছে, ছাত্রলীগ অনেক বৃহৎ সংগঠন, তারা চাইলেই একটা বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে। ছাত্রলীগ চাইলে তাদের কর্মীদের জন্য বিভিন্ন দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারে। বর্তমান এই তথ্যপ্রযুক্তির যুগ আওয়ামী লীগেরই অবদান, তাই আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের লোকেরা চাইলে দেশের সরকারি থেকে করপোরেট—সব সেক্টরে নেতৃত্ব দিতে পারেন। এর জন্য দরকার হবে অনেক প্রশিক্ষণ। যেমন ধরুন, করপোরেট সেক্টরে কীভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করতে হয়, কীভাবে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহার করতে হয় কিংবা কীভাবে একটি প্রফেশনাল ই-মেইল লিখতে হয়, একটি পরিপূর্ণ সিভি তৈরি করা, ভাইভা বোর্ডে কীভাবে কথা বলতে হয় ইত্যাদি। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়তো এসব অনেক দক্ষতা নিয়ে বের হন বা এসব দক্ষতা আছে। কিন্তু একেবারে তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা এসব থেকে বলতে গেলে বঞ্চিত। তাই রাজনীতি-পরবর্তী কর্মজীবনে প্রবেশ করতে ছাত্রলীগের প্রত্যেক কর্মীর যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেসব দিক চিন্তা করে এ রকম কিছু করা যেতে পারে।

স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরির অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্ব দায়িত্বভার গ্রহণ করেছে। দুই শীর্ষ নেতার ইমেজও অনেক ভালো। তাই বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রত্যেক নেতা-কর্মী আশা রাখবেন, যেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বের হন দক্ষ ও স্মার্ট ব্যক্তি হিসেবে। এতে দেশ, জাতি ও সমাজ—সবারই লাভ।

এইচ এম সাব্বির হোসেন
শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।