আমাদের গ্রামের একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম হচ্ছে, চরবড়বিলা ফকির বাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আমাদের গ্রামের জন্য এই বিদ্যালয়টি আশীর্বাদস্বরূপ। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই বিদ্যালয়টি গড়ে উঠেছে, তাদের কাছে এই গ্রামের মানুষ চিরকৃতজ্ঞ থাকবে। স্কুলটির বাহ্যিক সৌন্দর্য, চারপাশের পরিবেশ সবকিছু আপনাকে মুগ্ধ করবে। তবে চিন্তার বিষয় প্রতিষ্ঠার পর থেকে শিক্ষাক্ষেত্রে এই বিদ্যালয়টির তেমন কোনো সফলতা নেই। একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষাগত যে অবকাঠামো থাকা প্রয়োজন সেটিও এই বিদ্যালয়ে তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি।
শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল বলেন কিংবা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, মানসিক বিকাশ দুটোই অবনতির দিকে। একটি স্কুলের শিক্ষকেরা পড়াশোনার পাশাপাশি চারিত্রিক, মানসিক বিকাশ, নৈতিক শিক্ষা দিয়ে থাকেন। আর শিক্ষকেরা এই বিষয়গুলো ঠিকঠাক করছে কিনা তা দেখাশোনা করে স্কুল কমিটি। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, এই স্কুলে কোনো কমিটিও নেই। অথচ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এই কমিটি গঠনের ওপর একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছেন। যেখান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটি এবং অ্যাডহক কমিটির গঠনতন্ত্র, উদ্দেশ্য, দায়িত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে।
বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ ব্যবস্থাপনা, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ও শিক্ষকদের দায়িত্ব পালনের ওপর প্রতি বৎসর মে, আগস্ট ও ডিসেম্বর মাসের ৩০ (ত্রিশ) তারিখের মধ্যে উপজেলা/থানা শিক্ষা অফিসারের নিকট নির্ধারিত ছকে কমিটির সদস্যসচিব ও সভাপতির যৌথ স্বাক্ষরে প্রতিবেদন প্রেরণ করার কথা। কিন্তু যেখানে কমিটিই নেই, সেখানে এসব বিষয় তদারকি করবে কে? গ্রামবাসীর অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের খামখেয়ালীপনাতেই কমিটি গঠন করা হচ্ছে না। তিনি নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী স্কুলের প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্যই কমিটি দিতে চান না।
একটি শিশু যেমন তার মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা শেখে, পরবর্তীতে তার জীবনে কথায় কাজে সেই ভাষার প্রভাব বিস্তার লাভ করে। ঠিক তেমনি একটি শিশু যখন একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে যে জ্ঞান বা শিক্ষা লাভ করে পরবর্তী জীবনে সেই শিক্ষার প্রভাব ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ এবং রাষ্ট্রের ওপর পড়ে। এ জন্য বলা হয় প্রাথমিক বিদ্যালয় হচ্ছে শিক্ষার মূল ভিত্তি। আর শিক্ষার এই মূল ভিত্তির এমন করুণ অবস্থা কোনোভাবেই কাম্য নই। তাই গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতি আকুল আবেদন কমিটি গঠন এবং স্কুলটির সার্বিক তদারকির বিষয়টির উপর নজর দেওয়ার জন্য, যার ফলে স্কুলটিতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে।
ইমরান হোসাইন
গ্রাম: শম্ভুগঞ্জ, সদর: ময়মনসিংহ