গুচ্ছ ভর্তিতে এমন হযবরল সিদ্ধান্ত কেন?

২০২১-২১ সেশনে দ্বিতীয় বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় ভোগান্তি কমাতে ২০২০-২১ সেশন থেকে ২২ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু করা হয়। এ প্রক্রিয়ার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হ্রাস করা এবং উচ্চশিক্ষার যাত্রাকে সহজ করে তোলা। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে তা যেন হিতে বিপরীত হতে চলেছে।

কেন্দ্রীয়ভাবে ভর্তির অংশ হিসেবে শুরুর দিকে একজন শিক্ষার্থী যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছিলেন, সবগুলোতে বিষয় বা ডিপার্টমেন্ট ধরে মাইগ্রেশন এবং এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মাইগ্রেশনের ব্যবস্থা ছিল। ডিসেম্বরের শুরুতে ৪র্থ তালিকা থেকে এই প্রক্রিয়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়। এতে মধ্যম মানের ফলধারী বেশকিছু শিক্ষার্থী সমস্যার সম্মুখীন হয়েছিলেন। অনেকে পছন্দমতো বিষয় পেলেও পছন্দসই বিশ্ববিদ্যালয় পায়নি অথবা পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় পেলেও বিষয় মনঃপুত হয়নি। যেহেতু ৪র্থ পর্যায়ে এসে হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, হাতে আর বিকল্প উপায় না পেয়ে একটা নির্ধারণ করতেই হয়েছিল। এরপর গুচ্ছ কমিটি ভর্তি প্রক্রিয়া গতিশীল করার লক্ষ্যে ৭ম পর্যায়ে ভর্তিতে নতুন নিয়ম জারি করে। যা পুরোপুরি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বিরোধী।  

এ প্রক্রিয়ায় একজন শিক্ষার্থী যতগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করেছে, তারমধ্য থেকে একটাতেই ভর্তির জন্য বিবেচিত হবে। অন্যগুলোতে এখন অবধি বিষয় না আসলেও সেগুলো থেকে পুরোপুরি বাতিল বলে গণ্য হবে। বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা হয়েছে। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য শিক্ষার্থীদের গুণতে হয়েছে ৫০০ টাকা করে। অথচ এ পর্যায়ে এসে বিষয় না পেলেও অপেক্ষমান তালিকায় থাকার কোনো সুযোগ নেই, পুরোপুরি বাতিল হয়ে যাবে। তাহলে প্রশ্ন হলো পাঁচ শ টাকা দিয়ে একজন শিক্ষার্থী কেন আবেদন করলো? শিক্ষার্থীরা কী পেল?

তাড়াতাড়ি ক্লাস শুরুর অজুহাত দেখিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়ায় এরকম অমূলক সিদ্ধান্ত নেওয়া শিক্ষার্থীদের বৃহৎ অংশের প্রতি জুলুমের শামিল বলেও মনে করছেন ভর্তিচ্ছুরা। আগস্টে ভর্তি পরীক্ষা শেষ হলেও দীর্ঘ দুমাস অহেতুক অপেক্ষার প্রহর গুনে নভেম্বরে শুরু হয় মেরিট প্রকাশ ও বিষয় বরাদ্দ। এ যাত্রায় দেড় মাসের মাথায় গুচ্ছের নতুন এই পদ্ধতি টিকতে পারেনি। পরিবর্তন করতে হলো পদ্ধতি। বঞ্চিত হতে যাচ্ছে হাজার হাজার শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীবান্ধব গুচ্ছ পদ্ধতি কেন বার বার শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের কারণ হচ্ছে এমন প্রশ্ন তৈরি হয়েছে জনমনে।

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় অনেক শিক্ষার্থীদের শেষ ঠিকানা। কিন্তু এখানেও যদি পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয়, বিষয় না পায় কিংবা ক্ষতির সম্মুখীন হয়, আগামী চার বছর হতাশার বেড়াজালে ডুব দিতে হয়, তাহলে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। শিক্ষার্থীদের দাবি, সবকিছুই ঠিক ছিল এবং গতবারের তুলনায় এবারের পদ্ধতি অসাধারণ। কিন্তু মেরিট প্রকাশের ধীরগতি নিয়ে আপত্তি উঠেছিল। আর ধীরগতি কাটাতে গিয়ে গুচ্ছের নতুন সিদ্ধান্তে হতাশ শিক্ষার্থীরা। যদি সাপ্তাহে দুটা মেরিট অন্তত প্রকাশ করা যেত, এক্ষেত্রে কোনো অভিযোগের জন্ম হতো না হয়তো।

তাই ৭ম মেরিট থেকে জারি করা নতুন পদ্ধতি বাতিল করে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো বিষয় আসেনি, সেসব প্রতিষ্ঠানে অপেক্ষমাণ তালিকায় সুযোগ দেয়া হোক এবং সিট খালি থাকা সাপেক্ষে পরবর্তীতে বিষয় পেলে আগের মতো বিশ্ববিদ্যালয় মাইগ্রেশনের সুযোগ রাখা হোক। গুচ্ছ কমিটির কাছে এমনটাই প্রত্যাশা ভর্তিচ্ছুদের।

আবু মো. ফজলে রোহান
নবগ্রাম, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা
ই-মেইল: [email protected]