লবণাক্ত পানি বন্ধে অধিক ফসল উৎপাদন করুন

আমাদের দেশে জনসংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, কিন্তু জমির জোগান বাড়েনি। উৎপাদন আগের তুলনায় ক্রমেই বাড়ছে, তবে মানুষের চাহিদার তুলনায় জোগান কম। এই চাহিদা ও জোগানের ঘাটতির কারণে সমাজের অধিকাংশ নাগরিককে দ্রব‍্যমূল‍্যের যে প্রভাব, সেটা অবশ্যই ভোগ করতে হচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তা চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। আমাদের যে বিস্তীর্ণ ভূমি আছে, এর সদ্ব্যবহার করে সব জমিতে অধিক উৎপাদন বৃদ্ধির করার সময় হয়েছে। বাংলাদেশের ভূমি যে উৎপাদন বৃদ্ধির সহায়ক, সেটা সবাই জানি।

দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা জেলার পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় রয়েছে বিস্তীর্ণ ভূমি। এই অঞ্চলে বিস্তীর্ণ ভূমি ও পর্যাপ্ত শ্রমিক থাকতেও অধিক ফসল উৎপাদন ব‍্যাহত হচ্ছে। এর মূল কারণ লবণাক্ত পানি। এই দুটি উপজেলার লবণাক্ত পানি এমনভাবে গ্রাস করছে যে কৃষককে ফসল উৎপাদন করতে হলে আগেই ভাবতে হয়।

আমাদের পার্শ্ববর্তী উপজেলা দাকোপ। সেখানে লবণাক্ত পানি বন্ধ হয়ে বিভিন্ন রকমের ফসল উৎপাদিত হচ্ছে। প্রতিবছর উপজেলার সামগ্রিক উৎপাদন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষকের ভাগ‍্যোন্নয়ন হচ্ছে। বেকারত্ব হ্রাস পাচ্ছে। উৎপাদিত পণ্য অন্য অঞ্চলে যাচ্ছে।

আর পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় লবণাক্ত পানির কারণে অনেক রকম ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। কয়রা উপজেলায় যতটা ফসল উৎপাদন হচ্ছে, সে তুলনায় পাইকগাছা উপজেলায় হচ্ছে না। এই দুই উপজেলার বিস্তীর্ণ জমির লোনাপানিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করার ঘের রয়েছে।

গত ২০ বছর আগে বাগদা চিংড়ি চাষে চাষিরা যতটা লাভবান হয়েছেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ততটা লাভবান হচ্ছেন না। পাশাপাশি তাঁরা লোকসানের শিকার হচ্ছেন। যার মূল কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যা তথা অত‍্যধিক তাপমাত্রা। চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ এই তিন মাসে ৩৬, ৩৭, ৩৮ ও ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার কারণে বাগদা চিংড়ি ঘেরগুলোকে প্রধান সমস্যার মুখে পড়তে হয়। শুরুতে প্রতিকূল সমস্যা, পরবর্তী সময়ে আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্রে বৃষ্টিপাতের ফলে ঘেরের পানি মিষ্টি হওয়ায় বাগদা চাষে বিঘ্ন হয়। তার সঙ্গে বছরজুড়ে ভাইরাস। বাগদা চিংড়ি যে লবণাক্ত পানিতে বর্ধনশীল, সেটা সবাই জানি।

অন‍্যদিকে এই অঞ্চলের চাষিদের বাগদা চিংড়ি চাষে অজ্ঞতা আছে। ফলে উভয় প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবিলা করে তাঁদের কোনোমতে টিকে থাকতে হচ্ছে। লবণাক্ত পানির জন্য প্রতিকূল পরিবেশে মানুষের অর্থ সঞ্চয় হচ্ছে না, পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে না যুগোপযোগী কর্মসংস্থান। শিক্ষিত ব্যক্তিরা বেকারত্বের কশাঘাত থেকে মুক্তির জন্য ছুটে চলেছেন শহরে।

তবেই কি এই অঞ্চল এমনি অবহেলিত থেকে যাবে? কর্মঠ শ্রমিক থাকতে কি উপজেলা দুটি দাকোপের মতো উন্নয়ন তথা ক্রমে অধিক ফসল উৎপাদন লক্ষ‍্যের দিকে ছুটতে পারবে না?

আমরা লবণাক্তমুক্ত পরিবেশ চাই। মিঠাপানিতে ভেনামি চিংড়ি চাষ হচ্ছে। গলদা চাষ হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির মাছও চাষ হয়।

আমাদের সেদিকে নজর দিতে হবে। বাড়ির আঙিনায় মিষ্টিকুমড়া, বেগুন, আলুসহ হরেক রকমের শাকসবজি আর আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি রসাল ফলে সমৃদ্ধ হবে কৃষকের আঙিনা। হাঁস, মুরগি, ছাগল, গরু, মহিষ, ভেড়া প্রভৃতি চাষে স্বাবলম্বী হবেন নারীরাও।

আর বিস্তীর্ণ জমি চাষের আওতায় আসবে। ধান, আলু, তরমুজ, চুই, পেঁয়াজ, রসুন, হলুদ ইত‍্যাদি ফসল এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে অন্যত্র চলে যাবে। এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হবে। বনায়ন সৃষ্টি হবে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা পাবে।

আর এসব উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন টেকসই বেড়িবাঁধ, খাল খনন ও লবণ পানি উত্তোলন বন্ধ।

শিগগিরই আমাদের অঞ্চলে লবণমুক্ত পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে। এ জন‍্য এগিয়ে আসতে হবে পানি উন্নয়ন বোর্ড, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটসহ অধীন সব মন্ত্রণালয়; সেই সঙ্গে আরও এগিয়ে আসতে হবে খুলনা–৬ আসনের সংসদ সদস্যকে।

তবেই আমাদের এই ভূমি সবুজায়নে পরিণত হবে এবং কৃষকের মুখে সোনালি হাসি ফুটবে।

মো. আরিফুল ইসলাম
পাইকগাছা, খুলনা।