১৫ বছরে কত দূর এগিয়েছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সার্বিক দিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় করে তুলতে ১৫ বছরকে মোটেও কম সময় বলা যাবে না। সেদিক বিবেচনায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাব্যবস্থা ও এর অবকাঠামোকে দৃঢ় কাঠামোই সাজাতে যথেষ্ট সময় পাওয়া গেছে, এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

উত্তরের শিক্ষা বাতিঘর শিক্ষার্থীদের স্বপ্নে ভরা রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও শেষ হয়নি প্রক্রিয়াধীন বিশ্ববিদ্যালয়টির অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্যদের নানা অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে চার বছরের বেশি সময় ধরে থমকে রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জামাতা পরমাণুবিজ্ঞানী ড.এম.এ.ওয়াজেদের নামে অগ্রাধিকার প্রকল্প ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের নির্মাণকাজ। থমকে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর নামে নির্মাণাধীন ১০তলা বিশিষ্ট শেখ হাসিনা হল এবং স্বাধীনতা স্মারক।

জানা যায়, ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট, শেখ হাসিনা হল এবং স্বাধীনতা স্মারক নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে এ প্রকল্পের নকশা ও পরামর্শক পরিবর্তন এবং নির্মাণব্যয় বাড়িয়ে নতুন করে বরাদ্দের আবেদন জানালে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে দেয়। পরবর্তীতে দীর্ঘ সময় পার হলেও কাজগুলো শুরু করতে প্রশাসনের তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি।

১২ অক্টোবর ২০২৩ বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। ২০০৮ সালের এই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়টির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। তবে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল সব অনিশ্চয়তা কাটিয়ে ৩০০ শিক্ষার্থী ও ১২ জন শিক্ষক নিয়ে রংপুর শহরের ধাপ লালকুঠি এলাকায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে অস্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়। ২০০৮ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয়ে চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম।

২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি রংপুর শহরের লালবাগ ও মডার্ন মোড়ের মাঝামাঝি এলাকায় ৭৫ একরের নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাত্রা শুরু করে এ প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের অধীনে ২২টি বিভাগে শিক্ষাদান কার্যক্রম চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার এক যুগ পেরিয়ে ১৬ বছরে পদার্পণ করলেও শ্রেণিকক্ষ ও আবাসিক সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৮ শতাংশ শিক্ষার্থী আবাসিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোনো মিলনায়তন ও শরীরচর্চাকেন্দ্র।

এ ছাড়াও নিজ নামের বিশ্ববিদ্যালয়ে অবহেলিত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন। ক্যাম্পাসে নেই তাঁর কোনো প্রতিকৃতি। সিন্ডিকেট সভায় রোকেয়া স্টাডিজ নামে কোর্স চালুর কথা বলা হলেও বাস্তবে ঘটেনি তার কোনো প্রতিফলন। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাত গুটিয়ে বসে থাকা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

এ পর্যন্ত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচজন উপাচার্য এসেছেন। প্রথম উপাচার্য এক বছরও পূর্ণ করতে পারেননি। তিনি বলতেন, ‘কোনো এমপি-মন্ত্রীর সুপারিশে একজনেরও চাকরি আমার হাতে হবে না। যোগ্যতার ভিত্তিতে হবে।’ দ্বিতীয় উপাচার্য হিসেবে যিনি এসেছিলেন, সীমাহীন দুর্নীতির দায়ে মেয়াদ পূর্তির আগে সরকার তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছিল। নানা সমালোচনায় তৃতীয় উপাচার্য মেয়াদ পূর্ণ করেন। চতুর্থ উপাচার্য হিসেবে নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ মেয়াদ পূর্ণ করলেও তাঁর চলে যাওয়াটা সম্মানজনক ছিল না।

বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ যোগদানের পর এই বিশ্ববিদ্যালয়কে ইতিবাচকভাবে এগিয়ে নিতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় বিশ্ববিদ্যালয় সেশনজটমুক্ত হয়েছে এবং শিক্ষার্থীদের বহু প্রত্যাশিত মূল ফটকের নির্মাণকাজ চলছে। এ ছাড়া তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি মেগা প্রকল্পের কাজ পুনরায় শুরু করতে এবং অন্যান্য সার্বিক উন্নয়নের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে মোট এক হাজার কোটি টাকার বাজেট পাঠিয়েছেন। শিক্ষামন্ত্রী বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে দেখেছেন। এরপর অর্থ মন্ত্রণালয়ে বাজেট পাশ হলেই বাকি কার্যক্রম শুরু হবে। তিনি কোনো রকম বিতর্কে না জড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নেবেন, এটাই সবার প্রত্যাশা।

মো. আনোয়ার হোসেন
শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়