বলছিলাম চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের কথা। আমাদের শিক্ষাবিষয়ক কোনো নথির কোথাও যদি প্রদত্ত তথ্যে অসংগতি পরিলক্ষিত হয় তা যেন অভিশাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আর সেটি শিক্ষা বোর্ডের অব্যবস্থাপনা দেখলেই বোঝা যায়। শিক্ষাবোর্ডের অফিসের প্রবেশপথে নেই কোনো সঠিক তথ্য প্রদানকারী কিংবা পরামর্শক ব্যক্তি। তা ছাড়া ফি জমা দেওয়া, ফরম জমা দেওয়া এবং সনদ উত্তোলনসহ নানান কাজ করতে বহুতল ভবনের দ্বিতল, ত্রিতল, বহুতলে পদধূলি দিতেই হবে। শিক্ষাবোর্ডে গিয়ে মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা নিতে হয়। একটা কথা না বলে পারছি না, শিক্ষা খাতে সমৃদ্ধির লক্ষ্যে সবকিছু ডিজিটাল করেও শিক্ষাবোর্ড নিজেকেই ডিজিটাল করতে পারল না!
গত কয়েক দিন আগে একটি সংশোধন পরবর্তী কার্যসম্পাদনে গিয়ে অহেতুক কিছু হয়রানির শিকার হলাম। আমার মনে হচ্ছিল সেকশন অফিসার, কর্তা—ব্যক্তি, কর্মচারীদের চোখে আমরা যেন আসামি। কোন উপজেলা হতে আসছি তা বলার পর একজন কর্মকর্তা আমাকে বললেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার আজকে আসেননি। তাছাড়া, ‘আপনি চলে যান ,বাইরে...যান... ফাইল কীভাবে নিব, ফাইল ঠিক করে দিন, এখানে আসছেন কেন, ওই দিকে যান, এখানে কে আসতে বলেছে , ওই রুমে যান— এই রুমে যান’—এ রকম বহু বিরক্তিকর কথা শিক্ষা বোর্ডে শুনবেন।
একটু এলোমেলো করে ফাইল দিলেই যেন কর্তাদের মানসম্মান চলে যায়, এমন ব্যবহার ফুটে উঠে তাঁদের আচরণে। কতটা দূর থেকে মানুষ সেখানে যায়, সেটা হয়তো পাখার নিচে, লাক্সারি চেয়ারে বসা কর্মকর্তারা ভুলে যান। কোন সালের পরীক্ষার্থী বলার পরেও কথা ভালো করে না শুনেই বলেন, এই ফরমটি ছয়—সাতটি ফটোকপি করে এগুলো পূরণ করুন এবং ব্যাংকে তিন হাজার টাকার কাছাকাছি আসবে এগুলো ব্যাংক ড্রাফট করুন। আসলে যাচাই করে দেখলাম, শুধুমাত্র ২২৩ টাকায় যে কাজটা আমি সম্পাদন করতে পারব তার জন্য আমাকে ৩০০০ টাকার ব্যাংক ড্রাফট করতে পাঠালেন। সেখানে অনেক পরিবারের সদস্যরা যায়, অনেক সময় শিক্ষার্থী নিজে যায়, তাঁদের এ রকম ব্যবহারে এতটাই বিচলিত হয়ে পড়ে মানুষ যা স্বচক্ষে না দেখলে বুঝতাম না। তাঁদের কথা হলো এসব অযৌক্তিক প্রক্রিয়া সম্পাদন করা বাড়ি থেকে শিখে আসতে হবে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ হতে অনুরোধ করছি, যাবতীয় প্রক্রিয়া ডিজিটাল করুন। অনলাইনে সবকিছু সম্পাদন করার পর সংশোধিত কপির জন্য আবার একগাদা ফরম পূরণ করে জমা দিয়ে রি-ইস্যুর আবেদন করতে হচ্ছে, সেটাও জটিল করে ফেলেছেন এই কর্মকর্তারা। এপ্লাই থেকে ডকুমেন্ট প্রিন্ট পর্যন্ত (সাক্ষাৎকার বাদে) অনলাইন করুন। তারপর ওটিপি প্রক্রিয়ায় সশরীরে ডকুমেন্ট উত্তোলন চালু করুন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলব এসব অব্যবস্থাপনার লাগাম টানুন এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যবহারে আরও সেবাবান্ধব করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।
বহুতল ভবনে উঠানামা করতে করতে এবং কর্মকর্তাদের দুর্ব্যবহার সইতে সইতে ভাবতে লাগলাম, শিক্ষা বোর্ডেই চরম শিক্ষা পেলাম।। নিজের পদের ক্ষমতায় মগ্ন হয়ে তাঁরা প্রাপ্ত শিক্ষা উদ্গিরণ করে ফেলেছেন। অতি শিগগিরই শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবোর্ডে ব্যবস্থাপনার সঠিক প্রয়োগে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য অনুরোধ রইল।
তাহসিন রেজা খান
শিক্ষার্থী, সরকারি সিটি কলেজ চট্টগ্রাম