আমরা কি ভাইরাল আর ট্রল নিয়েই মেতে থাকব

আমরা কোথায় এখন? আপনি যে সময় হিরো-পরীকে নিয়ে ট্রল করছেন, সে সময় আপনার বাবা কোথায় জানেন? হয়তো বাজারে গিয়ে চাল কিনছেন। কাঁচাবাজারে ঢুকে এক কেজি তরকারি কিনলে অন্য পদ কিনতে পারবেন না, তাই হয়তো আধা কেজি নিচ্ছেন। জাতীয় মাছ ইলিশ কিনতে চাইলে বুক কাঁপছে! যাঁরা গাড়ি চালান, তাঁরা রাস্তায় মাইলের পর মাইল গাড়ি টানছেন। যাঁরা সমুদ্রে, তাঁরা মাঝসাগরে অনিশ্চিত জীবন নিয়ে ভাসছেন জলে। যাঁরা অফিসে, তাঁরা কখন বিকেল পাঁচটা হবে, তা গুনছেন।

প্রবাসীরা স্বদেশে আসার আশায় দিন গুনছেন। উষ্ণ গরম, কনকনে শীত ও পুকুরডোবা বৃষ্টি উপেক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সংসার নামক জাহাজের নাবিক হয়েছেন। কিন্তু আপনি কী করছেন?

ফেসবুকে নিজের বাপের টাকায় ইন্টারনেট প্যাকেজ কিনে হিরো-পরী, জাহাঙ্গীর-ওসামা কিংবা তামিম-সাকিবকে গালি দিচ্ছেন। হা হা ও ক্রোধের রিঅ্যাক্ট দিচ্ছেন। মাঝেমধ্যে লাগামহীন তর্কে জড়াচ্ছেন। অহংকার পুষে রাখছেন হৃদয়ে।

আপনি কি জানেন, হিরো আলমের ১৭ লাখ ইউটিউব সাবস্ক্রাইবার! ২৭৭ মিলিয়ন ভিউ রয়েছে তাঁর শুধু ইউটিউবে! ও মা গো! ইন্টারেনেটজুড়ে তাঁর ফলোয়ারের সংখ্যা সব মিলিয়ে ৪০ লাখের ওপরে। যাকে নিয়ে ট্রল করছেন, তাঁর মাসিক আয় কত জানেন?

আপনারা হিসাব করুন কত হবে? এই আশরাফুল আলম নামক মানুষটা লাখ লাখ টাকা আয় করছেন। এমনকি আপনার–আমার ট্রলের জন্যও তিনি অর্থ পাচ্ছেন। অথচ আপনার–আমার একটা ফেসবুক ভার্চ্যুয়াল অ্যাকাউন্ট ছাড়া কিছুই নেই। বিকাশ অ্যাকাউন্ট চেক করলে মাত্র ২ টাকা ৭৭ পয়সা। পাঁচ টাকার কম!

পরীমনির কয়টা বিয়ে, কয়টা প্রেম, সেই হিসাব রাখতে পারি আমরা। অথচ নিজে কয়টা বিষয়ে ডাব্বা মেরে বসে আছি, তার হিসাব রাখি না। সেমিস্টার ফি বাকি আছে, ব্যবসায় মন্দা চলছে। কিন্তু ঠিকই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরীমনিকে নিয়ে পড়ে আছি। জানেন কি, শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমনি একটি ফিল্মে কাজ করলে কত টাকা আয় করেন? আমার-আপনার কয় দিন লাগবে লাখ টাকা আয় করতে? ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ তাঁকে ফলো করে ফেসবুক।

তামিম-সাকিবরা অবশ্যই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। তাঁরা দুজনই নিজেদের কর্ম নিয়ে গর্ব বোধ করেন। আমরা তাঁদের কাজে খুশি। কিন্তু আমরা হয়তো একজনকে গালি দিচ্ছি, নয়তো আরেকজনকে আকাশে তুলছি। কিন্তু বিশ্বকাপে খেললেও তাঁরা তামিম-সাকিব, না খেললেও তামিম-সাকিব। এক ম্যাচে তাঁরা অনেক টাকা আয় করেন।

পরিশেষে বলতে চাই, আমাদের নিজেদের কাজকেও ততটুকু ফোকাস করতে হবে, যতটুকু অনলাইনে মানুষকে নিয়ে পড়ে থাকি। যাঁদের আমরা ট্রল করি, তাঁদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যথেষ্ট স্বাস্থ্যবান। আমি জ্ঞান দিচ্ছি না। ভুল বুঝবেন না। আমিও আপনার মতো সময়ের প্রবণতা দিয়ে আক্রান্ত একজন।

ওমর ফারুক
ইংরেজি বিভাগ
সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম