মাছের জন্য হুমকি চায়না দুয়ারির ব্যবহার বন্ধ হোক

এটাকে জাল বলা হলেও চায়না দুয়ারি মূলত মাছ ধরার একধরনের ফাঁদ। এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না।

বলা হয়ে থাকে, আমরা মাছে–ভাতে বাঙালি। ভাতের সঙ্গে মাছ খাওয়া আমাদের ঐতিহ্য, এতে সন্দেহ নেই। তবে এখন আর আগের মতো নদী, নালা বা পুকুরে মাছের দেখা পাওয়া যায় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশে গত কয়েক দশকে শতাধিক দেশি প্রজাতির মাছ বাজার থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে। এর পেছনে অনেক কারণের মধ্যে একটি কারণ হলো, বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করে মাছ ধরা।

বিভিন্ন ধরনের নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের কারণে আমাদের মাছের উৎস দিন দিন মারাত্মকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। বিশেষ করে চায়না দুয়ারি জালের ব্যবহার দিন দিন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটাকে জাল বলা হলেও চায়না দুয়ারি মূলত মাছ ধরার একধরনের ফাঁদ। এতে মাছ একবার ঢুকলে আর বের হতে পারে না। এটি চায়না জাল, ম্যাজিক জাল ইত্যাদি নামেও অনেকের কাছে পরিচিত। জেলেরা এই জাল ব্যবহার করে খুশি হলেও মূলত এ জাল কারেন্ট জালের চেয়েও ক্ষতিকর, যা মাছসহ জলজ জীববৈচিত্র্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।

যেকোনো ধরনের জাল দিয়ে মাছ শিকারের চেয়ে এই জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করা মাছের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। কেননা, এই জালে মাছ একবার ধরা পড়লে কোনোভাবেই আর বের হতে পারে না। এই জাল থেকে বড় থেকে শুরু করে অতি ক্ষুদ্র (পোনা মাছ) মাছ ও রক্ষা পায় না। এই জাল এত সূক্ষ্ম যে ছোট ছোট জাতের মাছ, এমনকি মাছের ডিমও অনেক সময় উঠে আসে। যদিও মা মাছ রক্ষায় এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই ধরনের জালের ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তবু মাছ শিকারের জন্য এই জালের প্রচুর ব্যবহার হচ্ছে।

অনেক অসাধু ও লোভী জেলে এ ধরনের জাল ব্যবহার করে নদী, নালা, বিল ও পুকুর থেকে মাছ শিকার করছেন। তাঁরা সাধারণত গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত এই জাল ব্যবহার করে মাছ শিকার করেন। এ কারণে দেশীয় অনেক ধরনের মাছের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে। যেহেতু এই জালে একবার মাছ ধরা পড়লে আর বের হতে পারে না, তাই অনেক বিপন্ন প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী মারা পড়ে। সেগুলো আর ওই সব প্রাণীর বংশবৃদ্ধিতে কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। অনেক দেশীয় প্রজাতির মাছ এখন আর গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে তেমন দেখা যায় না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এ ধরনের জালের কারণে জলজ জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদি এ ধরনের জালের উৎপাদন, বাণিজ্য ও ব্যবহার অতি দ্রুত বন্ধ করা না হয়, তবে দেশীয় মাছের উৎস পুরোপুরি বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের জালের বেশির ভাগ অবৈধ পথে এ দেশে ঢুকছে, যা এখন বিভিন্ন স্থানীয় বাজার বা হাটে খুব সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।


দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এসব নিষিদ্ধ জালের ব্যবহার বন্ধে যে অভিযান পরিচালনা করে, তা প্রয়োজনের তুলনায় অতি নগণ্য বা আদৌ তারা তাদের দায়িত্ব কতটুকু সঠিকভাবে পালন করছে, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। সর্বোপরি শুধু আইন করে জালের ব্যবহার নিষিদ্ধ করলেই এ থেকে জেলেদের বিরত রাখা সম্ভব নয়। তাদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। অবিলম্বে এসব জালের ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

মিলন হোসেন
শিক্ষার্থী, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।