পোষ্য কোটা যখন গলার কাঁটা

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা চালু হয়েছিল, তখন কোটা দরকার ছিল। তাছাড়া সংবিধানেও কিছু কোটা রাখা হয়েছে। কিন্তু এই কোটা পদ্ধতিই এখন অনেক চাকরি প্রত্যাশীর জন্য গলার কাঁটা। যার জনরোষ দেখা যায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে। আরও অন্যান্য দেশেও কোটা চালু আছে, কিন্তু আমাদের দেশের মতো অদ্ভুত কোটা কোনো দেশে চালু নেই।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলে ১ম ও ২য় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকার। কিন্তু বাকিগুলোতে ঠিকই কোটা চালু আছে। আর এসব চাকরিতেই কোটা বেশি চালু আছে। আমার কাছে পোষ্য কোটাকে সবচেয়ে বৈষম্যমূলক মনে হয়েছে। কারণ পোষ্য কোটার আদৌও কোনো দরকার আছে বলে মনে করি না। তাছাড়া মা-বাবার যোগ্যতা কখনো সন্তানের চাকরির যোগ্যতা হতে পারে না। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ (২০ শতাংশ), বাংলাদেশ রেলওয়ে (৪০ শতাংশ)-সহ অনেক চাকরিতে পোষ্য কোটা বিদ্যমান আছে। আর একটি কোটা চালু আছে, যার কোনো যৌক্তিকতাই খুঁজে পাই না; তা হলো আনসার ও ভিডিবি কোটা। আনসারের চাকরি করলেই তাদের সন্তানেরা সব চাকরিতে কোটা সুবিধা পাবে এ কেমন কথা?

চাকরিতে নিয়োগে পোষ্য কোটার মতো বৈষম্য আর নেই। সরল কথায় বলি, যে পরিবারে একজন চাকরি করে, সেই পরিবার এমনিতেই স্বাবলম্বী। আর একাধিক ব্যক্তি চাকরি করলে তো কথায় নেই। সুতরাং চাকরিতে পোষ্য কোটার অর্থ যেন চাকরিজীবীদের সন্তানেরা পৈতৃক সম্পত্তির মতো চাকরি পাবে। কেন তাদের এত সুবিধা দিতে হবে? পোষ্য কোটার অর্থ হলো, ‘তেলের মাথায় তেল দেওয়া’, ‘ধনীকে আরও ধনী বানানোর’ মতো।

অথচ কোটা চালু হয়েছিল সমাজের বিভিন্ন অনগ্রসর ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য; কিন্তু আমরা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ঢালাওভাবে বিভিন্ন কোটা চালু করে গরিব, মেধাবী, সৎ ও যোগ্য শিক্ষার্থীদের জ্ঞান ও যোগ্যতাকে মূল্যহীন প্রমাণ করছি। এমনকি আমরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায়ও কোটা রাখছি। যা মেধার অবহেলা ও বৈষম্য ছাড়া কিছুই না।

দুঃখের বিষয় আমাদের প্রতিবেশী ভারত এ ক্ষেত্রে অনেক এগিয়ে আছে। ভারত সরকারি চাকরিতে গরিব বা সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য ১০ শতাংশ কোটা রাখছে (৮ নভেম্বর ২২, প্রথম আলো)। সুতরাং সরকারি চাকরিসহ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বিদ্যমান পোষ্য কোটার অবসান হওয়া উচিত। আর যদি সুবিধা দিতেই হয় তাহলে যুক্তি অনুসারে কৃষক, দিনমজুর, শ্রমিকসহ সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের ছেলেমেয়েদের দেওয়া হোক।

মো. কাজল হোসেন
ভাষাবিজ্ঞান বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[email protected]