বিশ্ববিদ্যালয়ের হল কি ছাত্রনেতাদের?

বিশ্ববিদ্যালয় হলো উচ্চশিক্ষার সূতিকাগার। এখানে নতুন নতুন গবেষণা হবে, হবে জ্ঞানীদের মিলনমেলা। কিন্তু অসুস্থ ছাত্র রাজনীতিতে ভরে আছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি প্রাঙ্গণ। রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) প্রতিষ্ঠার ১৫ বছরেও দূর হয়নি আবাসন সংকট। চরম আবাসন সংকটের মধ্যেও হলের অধিকাংশ সিট দখলে রেখেছেন ছাত্রনেতারা। কেউ হলে উঠতে গেলে রাজনীতি করার শর্ত জুড়ে দেন তাঁরা। তাই যারা রাজনীতি করে না তারা সহজে হলের সিটও পায় না।

রাজনৈতিক নেতারা ৮ জনের সিটে একাই থাকেন আর অন্যান্য রুমে চারজনের আসনে ৮-১৩ জনের থাকার ব্যবস্থা করে দেন। এভাবে গাদাগাদি করে থাকার কারণে নষ্ট হচ্ছে পড়াশোনার পরিবেশ। খাওয়া, গোসল, ঘুম সবকিছুই পালা করে করতে হচ্ছে তাঁদের। ছোট এক বিছানায় দুজন থাকায় ঠিকমতো ঘুমাতেও পারেন না তাঁরা।

হল কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ৩৬৬ জনের মধ্যে ২০০ জনের বৈধ সিট। বাকি ১৬৬ জন জনের অধিকাংশই সাবেক শিক্ষার্থী। শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ২৪০ জনের মধ্যে ১৭০ জনের সিট বৈধ। অবৈধভাবে থাকা ৭০ জনের অধিকাংশই ছাত্রত্ব শেষ হওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থী। শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলেরও একই অবস্থা। হলে মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ১২ শতাংশ সিট পেলেও এর মধ্যে এভাবে অধিকাংশ সিট দখল করে আছেন ছাত্রত্ব শেষ হওয়া সাবেক শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদের ২২টি বিভাগে প্রায় ৮ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। এর বিপরীতে ৩টি আবাসিক হলে আসনসংখ্যা মাত্র ৯৪৮টি। এর মধ্যে ছেলেদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে সর্বাধিক আসন ৩৬৬টি ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলে ২৪০টি। আর মেয়েদের একমাত্র শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে আসনসংখ্যা ৩৪২টি । যা মোট শিক্ষার্থীর তুলনায় অতি নগণ্য। হিসাব অনুযায়ী হলে অবস্থানরত শিক্ষার্থীসংখ্যা মাত্র ১২%। বাকি ৮২শতাংশ শিক্ষার্থীকে থাকতে হয় বাইরের মেসে বা ভাড়া বাসায়। এ সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশে গড়ে উঠেছে মেস বাণিজ্য। বিকল্প না থাকায় মেস মালিকেরা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করেন। কেউ দু-এক মাসের জন্য উঠতে চাইলেও তাকে তিন মাসের টাকা জামানত দিতে হয়। এতে বিপাকে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যেও মেসের চড়া দামের খাবার বিল দিয়ে অতি কষ্টে দিন পার করছেন শিক্ষার্থীরা।

মেয়ে শিক্ষার্থীরা আরও বেশি এর ভুক্তভোগী। ছেলেদের জন্য ২টি হল থাকলেও মেয়েদের রয়েছে মাত্র ১টি হল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধেকই মেয়ে শিক্ষার্থী। বাইরের মেস ও ভাড়া বাসায় নিরাপত্তাসহ নানা জটিলতা পোহাতে হয় তাঁদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে আবাসিক হলে সিট না পাওয়া সত্যি অনেকটা আক্ষেপ ও খারাপ লাগার বিষয়। আবাসন সংকটের মূল কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর তুলনায় হল সংখ্যা অপ্রতুল। একই সঙ্গে হলে বৈধ পন্থায় সিট বণ্টনে রয়েছে প্রশাসনের উদাসীনতা ও যথাযথ উদ্যোগের অভাব। উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপীঠে এসেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণ কোনো ভাবেই কাম্য নয়। এ বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের চৈতন্য উদয় হোক।

মো. আহসান হাবীব শিক্ষার্থী, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর