ডিজিটাল জন্মনিবন্ধনের নামে হয়রানি কেন

জন্মের পর প্রথম সরকারি খাতায় নাম লেখানোই জন্মনিবন্ধন। একটি শিশু জন্মের পর সরকারিভাবে সে দেশকে জানান দেওয়ার নামই জন্মনিবন্ধন। এটি একজন নাগরিকের অধিকার। কিন্তু বর্তমানে সে অধিকার কি আমরা যথাযথ পাচ্ছি? এর উত্তর যদি আমরা উদ্‌ঘাটন করি, তাহলে বেশির ভাগ উত্তর হবে জন্মনিবন্ধনের অধিকার এখন হয়রানির কবলে। আমরা হয়রানি কেন বলছি, আসুন একটু জেনে নিই।

আমাদের মফস্‌সলের মানুষদের বড় একটা অংশ প্রান্তিক কৃষক। তাঁদের অনেকের প্রাথমিক শিক্ষাও নেই। যখন তাঁদের জন্মনিবন্ধন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যেতে হয়, তখন তাঁদের অনলাইন জটিলতা, মেশিনের সমস্যা, সচিব–চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতি ইত্যাদি নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সার্ভার জটিলতাকে দোহাই দিয়ে দিনের পর দিন তাঁদের হয়রানি করা হয়। এমন তথ্যও পাওয়া গেছে যে অনেকের বিদেশ যাওয়া পিছিয়েছে কিংবা জন্মনিবন্ধন সংশোধন করতে না পারায় ভিসা আসতে বিলম্ব হচ্ছে।

সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে অনেক দিন আগে আবেদন করেও সে আবেদন সার্ভারের জাঁতাকলেই চাপা পড়ে আছে, এখনো গৃহীত হয়নি। কারও কারও অনলাইন জন্মনিবন্ধনের আবেদন গ্রহণই করা হয়নি। যাঁরা মফস্‌সলে থাকেন, তাঁরা দৈনন্দিন কাজকর্ম ফেলে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান কিন্তু তাঁদের নিরক্ষরতাকে পুঁজি করে গদিতে বসে থাকা দায়িত্বরত ব্যক্তিরা তাঁদের হয়রানি করেন।

কয়েক মাস আগে সরকার শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি করার জন্য দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নোটিশ পাঠায়। সেখানেও অনলাইন জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। তখন অভিভাবকেরা তাঁদের সন্তানদের অনলাইন জন্মনিবন্ধন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে দিনের পর দিন ঘুরেও দিন শেষে আক্ষেপ নিয়ে বাসায় ফিরেন। এই হয়রানি যেন এখন মহামারির মতো হয়ে গেছে। এই ডিজিটাল বাংলাদেশে যদি সামান্য জন্মনিবন্ধনের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরতে ঘুরতে জুতার তলা ক্ষয় হয়ে যায়, তাহলে দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোয় কী হচ্ছে, সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি সেবাগুলো ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। একইভাবে জন্মনিবন্ধন প্রক্রিয়াকেও ডিজিটালাইজেশনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি আশার দিক ছিল। কিন্তু হতাশার বিষয় হচ্ছে অন্যান্য অনলাইন সেবাগুলো যতটা সহজলভ্য এবং অনায়াসেই এর সুবিধা ভোগ করা যাচ্ছে, জন্মনিবন্ধনের প্রক্রিয়া ততটাই জটিল প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী, কর্মজীবী—সব শ্রেণির মানুষেরই দিনের পর দিন, মাসের পর মাস ইউনিয়ন পরিষদ, উপজেলা পরিষদ আবার কখনো কখনো জেলা পরিষদ পর্যন্তও যেতে হচ্ছে। এ যেন ডিজিটাল সেবার নাম করে ডিজিটাল হয়রানিই করা হচ্ছে।

আমরা সবাই জানি, জন্মনিবন্ধন অতীব জরুরি একটি বিষয়। এটি একজন নাগরিক হিসেবে যেমন অধিকার, তেমনি নাগরিক সেবা পাওয়ার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ। একটা নির্দিষ্ট সময়ের আগপর্যন্ত জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয় না। সে সময় পর্যন্ত এই জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়েই নাগরিক সুবিধাগুলো ভোগ করতে হয়। এই সনদে ভুল বা কোনো কোনো জটিলতা নিরসন করা না গেলে নাগরিক সেবা থেকেও বঞ্চিত হতে হয়। সুতরাং এত জরুরি একটি সেবার ক্ষেত্রে এহেন হয়রানি ও জটিলতা বন্ধে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

  • সাকিব হাসান
    শিক্ষার্থী
    গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়