ভর্তিযুদ্ধে অনুত্তীর্ণ হওয়া মানে জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়া নয়

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর প্রায় প্রত্যেক শিক্ষার্থী স্বপ্ন দেখে দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা সাধারণ মানুষের আলোচনায় যখন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ না পাওয়া অনেকেই অসম্মানিতবোধে নীরব হয়ে যান। দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে এসে অনেককেই দেখা যায় হতাশ হয়ে পড়তে।

তবে এটি আমাদের মনে রাখতে হবে যে, প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় লাখ লাখ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ মিলে মাত্র ৫০ হাজার শিক্ষার্থীর। প্রতিযোগিতায় পেরে না উঠা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিক্ষার্থী হাল ছেড়ে দেন। একদিকে নিজেদের স্বপ্ন ভঙ্গের তীব্র যন্ত্রণা, অন্যদিকে পরিবার ও পারিপার্শ্বিক অদৃশ্য চাপ, সব মিলিয়ে তারা নিজেদের মনে করে যুদ্ধে হারা সৈনিক।

এ ক্ষেত্রে পরিবার থেকে ছেলেদের ছাড় দেওয়া হলেও বিপত্তি ঘটে মেয়েদের ক্ষেত্রে; পরিবারের চাপে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। অনেককে আবার আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের উসকানিমূলক কথাও শুনতে হয়। এই কারণগুলোর জন্য আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে। সমাজকে এ কথা কে বোঝাবে যে, সফলতার পূর্বশর্ত কেবল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাওয়া নয়, বরং পরিশ্রম করার মাধ্যমে নিজেকে যুগোপযোগী করে তোলার মধ্যেই সফলতা নিহিত।

আমরা জানি, পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি। অতএব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না মিললে ভেঙে না পড়ে দৃঢ় সংকল্পে এগোনো গেলে সফল হওয়া অসম্ভব কিছু নয়। অভিভাবক, আত্মীয়স্বজনসহ সবাইকে তাই এ বিষয়ে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কেননা ভর্তিযুদ্ধে অনুত্তীর্ণ হলেও একজন শিক্ষার্থীর সামনে বিশাল এক সম্ভাবনা অপেক্ষায় থাকে, জীবনযুদ্ধে হেরে যাওয়ার তাই প্রশ্নই উঠে না।

মোস্তফা কামাল
শিক্ষার্থী
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়