গাছ কাটার মূল্য আমাদের এভাবেই দিতে হচ্ছে

আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৃক্ষের অবদান অভাবনীয় ও অনস্বীকার্য। বিজ্ঞানের দ্বারা প্রমাণিত, বৃক্ষ আমাদের অক্সিজেন দেয় এবং আমাদের থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড নেয়। বৃক্ষ আমাদের খাদ্য দেয়, কাঠ দেয় এবং বৃক্ষ মাটির ক্ষয়রোধ করে। বৃক্ষ আমাদের পরিবেশকে সজীব ও সতেজ রাখে।

পৃথিবীকে বাসযোগ্য করেছে এই বৃক্ষ। বৃক্ষরোপণ করে লাভবান হয়নি, এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। আমরা যে অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে আছি তা বৃক্ষের কাছ থেকে পাই। এ ছাড়া বৃক্ষের কাছ থেকে খাদ্য পাই, আশ্রয়ের জন্য বাসস্থান পাই, জ্বালানি পাই, বিদ্যুতের খুঁটি পাই, নৌকার কাঠ পাই, বৈচিত্র্যপূর্ণ আসবাবপত্র পাই।

কিন্তু পরিতাপের বিষয় হচ্ছে, এই উপকারী বৃক্ষকেই আমরা কেটে ফেলছি। প্রতিনিয়ত বাসস্থানের জন্য গাছপালা কাটা হচ্ছে। বর্তমানে মানুষের চলাচলের রাস্তা ও পাকাকরণের তাগিদেও রাস্তার ধারের গাছপালা কাটা হচ্ছে।  এভাবে গাছপালার বিস্তার কমিয়ে আনার ফলে বর্তমানে আজকের এই অবস্থা।

বর্তমানে বাংলাদেশের স্মরণকালের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এই তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে হিট স্ট্রোকে অনেক মানুষ মারা গেছে। কিন্তু কেন হঠাৎ তাপমাত্রা বেড়ে গেছে তা প্রশ্ন থেকে যায়!  আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলে দেখা যায়, সেখানে পর্যাপ্ত বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে উদ্যান তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও পরিত্যক্ত স্থানে বৃক্ষরোপণ করা হয়েছে ফলে সেখানে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রিত রয়েছে।

অন্য দিকে আমরা যদি বাংলাদেশের দিকে লক্ষ্য করি, বিশেষ করে রাজধানী ঢাকায় দিনদিন দালানকোঠা বৃদ্ধি পাচ্ছে, সামান্যটুকু জায়গা পেলেও সেখানে তৈরি করা হচ্ছে অট্টালিকা। ফলে ঢাকা হয়ে উঠছে অনিরাপদ শহর।

একটি দেশের ভৌগোলিক পরিবেশের জন্য দেশের আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। কিন্তু বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ মাত্র ১৬ শতাংশ। কিন্তু  কেন এই দশা? বৃক্ষনিধন করে ইটভাটা, মিল-কারখানা গড়ে তোলা হচ্ছে আর নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করছে।

এই অপরিকল্পিত শিল্প-কারখানা ও নগরায়ণের কারণেই মূলত নির্বিচারে বৃক্ষনিধন করা হচ্ছে। এভাবে বৃক্ষনিধনের ফলে পৃথিবী যেভাবে উষ্ণ হয়ে উঠছে, তাতে অবাধে সবুজ ধ্বংস হবে। এখনই সময় এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার।

গাছপালা তো কাটা হচ্ছে আবার শিল্প-কারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে, ধোঁয়ায় নিকটবর্তী গাছপালা ধ্বংস হচ্ছে। শিল্প-কারখানারও প্রয়োজন আছে। তবে তা বৃক্ষমুক্ত এলাকায় গড়ে তোলা উচিত। একটি গাছ কাটলে দুটি গাছের চারা রোপণ করতে হবে, এমন স্লোগান থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ নেই। বনদস্যুরা গাছ কেটে পাচার করছে। ফলে বন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে অনেক দামি ও পুরোনো গাছ, যা পরিবেশের জন্য বড় হুমকিস্বরূপ।

আমাদের একদিকে বৃক্ষনিধন বন্ধ এবং অন্যদিকে বেশি বেশি বনায়নের জন্য সরকারের বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সময়োপযোগী। কেউ যাতে বৃক্ষ উজাড় করে অপরিকল্পিত মিল-কারখানা গড়ে না তোলে, সেদিকেও নজর দেওয়া আমাদের কর্তব্য।

প্রথমত সরকারকে সরকারি বৃক্ষ নিধন ও পাচার বন্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অতঃপর জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাড়ির আঙিনার বৃক্ষসমূহ অযথা না কাটার পরামর্শ দিতে হবে। প্রাণী জগতের টিকে থাকার জন্য বৃক্ষের উপস্থিতি অনস্বীকার্য। তাই বর্তমানে এই তীব্র তাপপ্রবাহ নিয়ন্ত্রিত করার জন্য এখনই সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া সময়ের দাবি অন্যথায় সামনের বছরগুলোতে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। অতএব আসুন নিজে সচেতন হই এবং অন্যকে সচেতন করি।

সাকিবুল হাছান
ঢাকা কলেজ, ঢাকা