বর্তমান সময়ে কাউকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা কী? উত্তর হবে, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি। খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার। জীবনধারণের জন্য খাদ্য অত্যাবশ্যক, আবার সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য নিরাপদ পুষ্টিমানসম্পন্ন ও সুষম খাবার গ্রহণ করা প্রয়োজন। একজন মানুষ যখন তাঁর প্রয়োজনীয় খাদ্য গ্রহণ করতে পারেন না, তখন তিনি কোনো কাজই ঠিকঠাক করতে পারেন না। নিত্যপণ্যের দাম লাগামহীনভাবে বেড়েই চলছে। শত চেষ্টা করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এখন একটি আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা শুনলেও মানুষ ততটা ভয় পান না, যতটা এখন দ্রব্যমূল্য নিয়ে পাচ্ছেন।
কয়েক মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির কারণে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। চাল, ডাল, চিনি, তেলসহ প্রায় প্রতিটি নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের দাম এখন আকাশচুম্বী। সাধ্যের বাইরে মুরগি, গরু ও খাসির গোশত। পেঁয়াজ, আলু, ডিম, কাঁচা মরিচ—সবকিছুর দামই ঊর্ধ্বমুখী।
আমরা যদি একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের উদাহরণ টানি, যাঁর ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা, তাহলে প্রশ্ন জাগে, তিনি কীভাবে এই দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে মানিয়ে জীবনধারণ করছেন? এই আট হাজার টাকা মজুরির মধ্যে দুই হাজার টাকা বা এর বেশি ব্যয় হয় ঘরভাড়া বাবদ। বাকি টাকা দিয়ে সন্তান–পরিবারের খাবার খরচ, মা–বাবা থাকলে তাঁদের কাছে টাকা পাঠাতে হয় আর অসুখবিসুখ তো রয়েছেই দরিদ্র মানুষের নিত্যসঙ্গী! এই অল্প মজুরি দিয়ে ঠিকমতো ভাত-ডালই যাঁদের কপালে জুটে না, তাঁদের আবার আমরা পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার কথা বলি! পুষ্টিকর খাবার সেটা তো রীতিমতো সোনার হরিণ এসব দরিদ্র মানুষের কাছে। এই পুষ্টিহীনতা নিয়ে আমাদের দেশের একটি বিশাল জনগোষ্ঠী ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ তাদের কর্মক্ষমতা অথবা কর্মদক্ষতা স্বাভাবিকভাবেই কম থাকে।
এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ, উন্নয়নের জোয়ার বইছে চারদিকে। এই উন্নয়ন দিয়ে কী হবে, যদি মানুষ দুবেলা দুমুঠো খেতে না পারেন। আমি বলছি না, উন্নয়নের প্রয়োজন নেই। কিন্তু যে দেশের মানুষ মৌলিক অধিকার পূরণ করতে হিমশিম খান, সেখানে উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমি মনে করি, সরকারের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া উচিত দ্রব্যমূল্য কীভাবে হ্রাস করা যায়, সেদিকে। মানুষের খাদ্যনিরাপত্তার দিকে অধিক মনোযোগী হওয়া দরকার সরকারের।
বর্তমান অবস্থা দীর্ঘ সময় ধরে বিরাজমান থাকলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত মানুষের জীবনে আরও বেশি নাভিশ্বাস উঠবে। অভিযোগ রয়েছে, সিন্ডিকেট করে বাজারে পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এর অবসান হওয়া জরুরি। বাজারের অস্থিরতা দূর করতে হলে অবশ্যই অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট দমন করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নিত্যপণ্যের বাজারে কেউ যেন কারসাজি না করে, সেদিকে নজর দিতে হবে। খাদ্য মন্ত্রণালয়কে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে। যাঁরা অনিয়ম করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি। আমাদের প্রত্যাশা, অতি মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের লাগাম টেনে ধরতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। প্রয়োজনে তাঁদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
ইমরান হোসাইন
শিক্ষার্থী
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।