আমাকে বাঁচতে দিন

কেউ একজন একবার আমার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিল। আমি কোন জিনিসকে বেশি ভয় পায় পৃথিবীতে? আমি এক ন্যানো মুহূর্তে বলে দিলাম—মাদক। তিনি কিছু সময় চুপ থেকে বললেন, অনেকে বলে সাপ, অন্ধকার, পুলিশ, সাগর, বনজঙ্গল,  ব্লা ব্লা ইত্যাদি। কিন্তু আপনি মাদক বললেন কেন? নেশাময় দ্রব্য ছাড়াও তো কত ভয়ংকর জিনিস আছে দুনিয়াতে।

আমি অল্প সময় নিয়ে বললাম। আমি অনেক আগে থেকেই ‘দ্য কপিল শর্মা শো’ পছন্দ করতাম। সম্ভবত ২৩ এপ্রিল ২০১৬ প্রথম জার্নি হয় তাঁদের। কফিলের চেয়ে সুনীল গ্রোভারকে (গুলাটি) বেশি ভালো লাগত আমার। তিনি না হলে মঞ্চ জমেই না। সুনীল মানে আলাদা একটা হাসির সমুদ্র। নয়া নব্য জোকস! বড় বড় নায়ক/নায়িকারাও হাসতে হাসতে মঞ্চে গড়াগড়ি করতেন। ১৮ সালের দিকে লক্ষ্য করলাম সুনীল আর পারফর্ম করছে না। ভাবলাম হয়তো ছুটিতে গেছেন। কিন্তু পরে জেনে বেশ হতভম্ব হলাম।

কপিল ও সুনীলের মধ্যে ছোট্ট একটা সমস্যা হয়েছে। সমস্যা ছিল অস্ট্রেলিয়া থেকে পারফর্ম করে আসার সময় বিমানে তাঁদের ঝামেলা সৃষ্টি হয়। কপিল সুনীলকে মারতে গিয়েছিলেন সম্ভবত।  তাও আবার মদ পান করে অবচেতনে। তাই তাদের মধ্য অপ্রত্যাশিতভাবে দ্বন্দ্ব হয়। পরে আর কখনো সুনীল পারফর্ম করেননি কপিলের সঙ্গে। সুনীল ভক্ত সুনীলকে এখনো মিস করে দ্য কপিল শর্মা শোতে! এই রকম আরো অহরহ ঘটনা আছে। মাদকের জন্য সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। মাদকের জন্য হত্যা হয়েছে অগণিত।

ঐশীর কথা চিন্তা করুন আপনারা। ২০১৩ সালের ঘটনা। ১৬ আগস্ট সন্ধ্যায় রাজধানীর চামেলিবাগের বাসা থেকে মাহফুজুর রহমান ও তাঁর স্ত্রীর স্বপ্না রহমানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাঁরা ছিলেন ঐশীর মা-বাবা। মাহফুজুর রহমান ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। ঘটনার পর থেকে মেয়ে ঐশী ও গৃহকর্মী সুমি নিখোঁজ ছিল। ১৭ আগস্ট ঐশী ঐচ্ছিকভাবে পল্টন থানায় আত্মসমর্পণ করে। নিজেই মা-বাবাকে খুন করার বিষয় স্বীকার করে। পুলিশের দাবি, সে মাদকাসক্ত ছিল। এক মিনিট দুনিয়ার সব ভুলে ঐশীর কথা চিন্তা করুন! মাদক কী করতে পারে?

জীবন্ত আর একটা উদাহরণ শুনুন। আমার পাশের বাড়ির ঘটনা। তখন আমি তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ি। রাত দুইটার মতো হয়েছে। আমাদের বাড়ির দরজা ধাক্কা দিচ্ছে ও আব্বুকে ডাকছে কেউ একজন। মেয়েই ছিল। আমার আব্বুকে ছোট আব্বু ডাকত মেয়েগুলো। আব্বু দরজা খুলতেই ছোটটা আমার আব্বুর কম্বলে ঢুকে গেল। বড়টা আমার খাটের পাশে লুকিয়ে রইল। আমি ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে তাকিয়ে আছি। বড় আপুটা আমার অনেক সিনিয়র ছিল। মুখ চেপে ধরে কাঁদছে। ঠিক যেন মুভির কোনো দৃশ্য। আমাকে ইশারায় মাথা নাড়িয়ে ‘না’ বলছে শুধু। মাথাটা এই পাশ ওই পাশ করছে শুধু ‘না’ বলার জন্য।

তাদের বাবা মদ পান করে এসে তাদের মাকে মেরেছে। ভাইকেও। মেয়ে দুটিকে লম্বা দা নিয়ে খুঁজছে কেটে ফেলার জন্য। তাদের বাবা ঠিকই আমাদের বাড়িতে ঢুকলেন। বাবা ঝাড়ি মেরে বের করে দিলেন। উনি মানে ওই চাচা আমার বাবাকে ভয় পেতেন একটু-আধটু। আমি এখনো মেয়েগুলোর কথা চিন্তা করি। এখনো ষাট বছর বয়সেও মদ পান করে গালাগালি করে বাড়িতে চাচা।

মস্ত বড় শিল্পী, আন্তর্জাতিক মানের বড় খেলোয়াড়, খ্যাতনামা নায়ক-নায়িকা, রাজনৈতিক নেতা অনেকের অকালে জীবন গিয়েছে শুধু মাদকের জন্য। নিজেকে নিজে শেষ করে দিয়েছেন তাঁরা।  এ ছাড়া ব্রেকিং নিউজ পাবেন ঠিক এমন! মাদকাসক্ত বাবার হাতে ছেলে খুন। মাদকাসক্ত ভাইয়ের হাতে বোনের মৃত্যু। মাদকাসক্ত ছেলের হাতে মা/বাবা খুন। মাদকাসক্তের হাতে প্রতিবেশীর মর্মান্তিক মৃত্যু।  মাদকাসক্তের হাতে শিক্ষক খুন। মাদকাসক্তের হাতে ছয় বছরের শিশু ধর্ষণ!

সুতরাং মাদকের বিরুদ্ধে জেগে উঠুন। প্রশাসনকে সাহায্য করুন। আমাকে বাঁচান। এলাকা সমাজ বাঁচান। যুব সমাজ বাঁচান। দেশ বাঁচান। দেশকে শান্তি রাখুন। মাদককে না বলুন।

ওমর ফারুক

ইংরেজি বিভাগ
সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম
ইমেইল : [email protected]