প্রচণ্ড শীতে গরিবদের অশেষ কষ্ট

এ অতিরিক্ত শীতের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হলো দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ।

চলতি শীত মৌসুমে সারা দেশে যে অতিরিক্ত শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা স্বাভাবিক শীতের সীমা বহু আগেই অতিক্রম করেছে। ভোরের কুয়াশা, হিমেল বাতাস এবং সূর্যহীন দিনগুলো সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে চরমভাবে ব্যাহত করছে। বিশেষ করে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তাপমাত্রা এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসায় শীত আর শুধু একটি ঋতু নয়, এটি রূপ নিয়েছে নীরব দুর্যোগে।

এ অতিরিক্ত শীতের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী হলো দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষ। খোলা আকাশের নিচে থাকা মানুষ, দিনমজুর, রিকশাচালক ও শ্রমজীবী জনগোষ্ঠীর দৈনন্দিন জীবনসংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। কাজ কমে যাওয়ায় অনেকেই আয়ের উৎস হারাচ্ছেন। অপর দিকে শীতবস্ত্রের অভাবে শিশু ও প্রবীণেরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও নানা শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শীতজনিত মৃত্যুর খবর উদ্বেগজনক।

গ্রামাঞ্চলে পরিস্থিতি আরও জটিল। সেখানে শীতবস্ত্রের প্রাপ্যতা সীমিত, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ কম এবং সচেতনতার অভাব স্পষ্ট। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ত্রাণ বিতরণে সমন্বয়হীনতা ও দেরি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করছে।

অতিরিক্ত শীতের প্রভাব কৃষি খাতেও পড়েছে। শীতকালীন ফসল, বিশেষ করে সবজি ও বোরো চারা ক্ষতির মুখে পড়ছে। কুয়াশার কারণে রোগবালাই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা কৃষকের উৎপাদন ব্যয় বাড়াচ্ছে। এর প্রভাব ভবিষ্যতে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ওপরও পড়তে পারে।

এ পরিস্থিতিতে সরকারের দায়িত্ব কেবল আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ায় সীমাবদ্ধ থাকা চলবে না। শীতপ্রবণ অঞ্চল চিহ্নিত করে পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র বিতরণ, ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসাসেবা জোরদার এবং আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা জরুরি। একই সঙ্গে জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও বিত্তবানদের মানবিক দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে আসতে হবে।

শীত প্রকৃতির নিয়ম, কিন্তু অতিরিক্ত শীতের কষ্ট যেন মানুষের অবহেলার কারণে দুর্ভোগে পরিণত না হয়—সেদিকে দৃষ্টি দেওয়াই এখন সময়ের দাবি। মানবিকতা, দ্রুত পদক্ষেপ ও সমন্বিত উদ্যোগই পারে এ শীতে অসহায় মানুষের জন্য কিছুটা উষ্ণতা ফিরিয়ে আনতে।

  • আনিকা ইসলাম
    ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া