একুশে বইমেলা যেন ছবি তোলার মেলা

অমর একুশে গ্রন্থমেলা, ব্যাপকভাবে পরিচিত একুশে বইমেলা হিসেব। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে এই মেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলা ভাষার জন্য বুকের তাজা রক্ত দিয়ে যে বীরত্বপূর্ণ ইতিহাস তৈরি করেছে এ দেশের মানুষ, সেই স্মৃতিকে ধরে রাখতেই এই মাসে আয়োজিত বইমেলার নামকরণ করা হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা।

উইকিপিডিয়ার তথ্য বলছে, ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তারিখে চিত্তরঞ্জন সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বর্ধমান হাউস প্রাঙ্গণে বটতলায় এক টুকরো চটের ওপর কলকাতা থেকে আনা ৩২টি বই সাজিয়ে বইমেলার গোড়াপত্তন করেন। এই ৩২টি বই ছিল চিত্তরঞ্জন সাহা প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ থেকে প্রকাশিত বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের লেখা বই। এই বইগুলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রকাশনা শিল্পের প্রথম অবদান। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত পর্যন্ত তিনি একাই বইমেলা চালিয়ে যান।

 ১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে মেলার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত করেন। ১৯৮৩ সালে কাজী মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে প্রথম অমর একুশে গ্রন্থমেলার আয়োজন সম্পন্ন করেন। সেই ৩২টি বইয়ের ক্ষুদ্র মেলা কালক্রমে বাঙালির সবচেয়ে স্বনামধন্য বইমেলায় পরিণত হয়েছে।
   
  বইমেলা হলো এমন একটি স্থান যেটি লেখক পাঠকদের মিলনমেলা। বইমেলার মাধ্যমে দেশের সাহিত্য-শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। বইমেলার সবচেয়ে নান্দনিক দৃশ্য মা-বাবার হাত ধরে সন্তানের বইমেলায় আসা। আর এর মধ্যমে শিশু-কিশোররা পরিচিত হয় বইমেলার সঙ্গে, পরিচিত হয় বইয়ের সঙ্গে। বইমেলায় কেউ আসে পছন্দের লেখকের বই ক্রয়ের জন্য, কেউবা আসে বই দেখার জন্য, আবার কেউ মেলায় আসে ঘুরতে কিংবা লেখকের দর্শন পেতে যে যেই কারণেই আসুক না কেন, দিন শেষে সবাই মিলেমিশে একাকার হয়ে সৃষ্টি হয় একটি সাংস্কৃতিক জগৎ।

নিজের ইতিহাস ঐতিহ্যকে জানার যত রকম প্রক্রিয়া আছে তার মধ্যে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে রয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালে এসে মনে হচ্ছে বইমেলা এখন সেলফি মেলা। বইমেলায় বেশির ভাগ যুবক-যুবতীরা আসে বইয়ের সঙ্গে ছবি উঠিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তথা ফেসবুকে সেই ছবি শেয়ার করার জন্য। আমি নিজেও বইমেলার একটি স্টলে ছিলাম তাই কাছ থেকে বইমেলার দৃশ্য দেখার সুযোগ হয়েছে।

একটি ঘটনা এমন যে, কয়েকজন ছেলে এসে এক স্যারের বইয়ের সঙ্গে ছবি উঠিয়ে বই না নিয়ে চলে যাচ্ছে! পরে বুঝতে পেরেছি, এই ছবি স্যারকে দেখিয়ে বলবে, স্যার আমরা আপনার বই ক্রয় করেছি। অনেকে তরুণ-তরুণী ঘণ্টার পর ঘণ্টা বইমেলায় ঘোরাঘুরি করে অথচ একটি বই ক্রয় করে না বা বই খুলেও দেখে না। চিন্তা করা যায় আমাদের বই পড়ার প্রতি কত অনীহা!

বই সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। মানুষের অর্জিত জ্ঞান, ইতিহাস এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে  পৌঁছে দেওয়ার জন্য বই যোগ যোগ ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বই। তাই আসুন বইমেলা যাই বই উল্টিয়ে দেখতে বই পড়তে, শুধু ঘোরাঘুরি আর সেলফি বা ছবি ওঠাতে নয়।  

সাকিবুল হাছান
ঢাকা কলেজ