হল বা মেসের শিক্ষার্থীদের সকালে খাওয়ার প্রতি অনীহা কেন

‘ঘুম থেকে উঠলি? ব্রাশ করে আয়, খেতে যাব।’ দুই বন্ধু এভাবেই সকালে ঘুম ঘুম অবস্থায় হয়তো একজন আরেকজনকে খেতে যাওয়ার বায়না করে। কিন্তু কখনো সকালের খাবার খেতে যাওয়া হয় না। কিংবা বিস্কুট, কেক বা কলাসহ অনেক কিছু নিজেদের সংরক্ষণে থাকলেও অনীহাবশত আর খাওয়া হয় না সেগুলো। খাওয়া হবেই–বা কী করে? ঘুম থেকে এই উঠবে বলে তো বেজে গেল দুপুর ১২টা। এ রকমই নিত্যদিন কেটে যাচ্ছে হল বা মেসে অবস্থানরত বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা স্কুলশিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা সকালে নাশতা খাওয়ার চেষ্টা করে কিংবা কোনো কারণে খেতে না পারলেও বাকি মিলগুলো সময়মতো খেয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এমনটি হওয়ার কারণও যে কারও চোখ এড়িয়ে যাওয়ার মতো নয়।

বেশির ভাগ হলের শিক্ষার্থীই রাতভর জেগে থেকে পড়ালেখা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এরমধ্যেও কেউ গেম খেলে, হঠাৎ রাতে হল থেকে বেরিয়ে পড়ে ঘোরাঘুরি করতে। কেউ রাতভর বসে বসে আড্ডা দেয়, কোথাও কোথাও গানের আসরও বসে যায়। এসব থেকে অনেকের মন ঘুমাতে যেতে নারাজ। রাত হয়েছে তো কী? দিনের বেলা না হয় ঘুমিয়ে নেওয়া যাবে সারা দিন ধরে। পরে সকালে অনেক কষ্টে ওঠার পর শুরু হলো বই বা শিট নিয়ে মুখস্থ করা। অল্প কিছুক্ষণ পর মনে হয়, নাহ্‌, কিছুতেই যে মাথায় ঢুকছে না। থাক, যা হওয়ার হবে। এ চিন্তা নিয়ে কেউ সকাল ১০টায় বা দুপুরে পরীক্ষা দিতে চলে যায় কোনো নাশতা না করেই।

আবার অনেকে সকাল সকাল ক্লাস ধরতে গিয়ে খাওয়ার কথা ভুলে যায়। আসলে এটা ভুলে যাওয়া নয়, অনীহার অভ্যাস। যাহোক, এভাবেই আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের দিন কেটে যাচ্ছে; সকালে না খেয়ে কিংবা সারা দিন দুই বেলা খেয়ে। কেউ কেউ কখন খেয়েছে কিংবা খেয়েছে কি না, সেটিও মনে রাখে না। এর ফলে অনেকের স্বাস্থ্যগত দুর্বলতা, শারীরিক নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এর জন্য অবশ্য হল কর্তৃপক্ষও নানাভাবে দায়ী।

বলা যায়, হলের ডাইনিংগুলোর খাবার এত নিম্নমানের ও অস্বাস্থ্যকর যে এসব খেলে একজন সুস্থ মানুষ যেকোনো সময় অসুস্থ হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন হলের ডাইনিংয়ে দেখা যায়, পচা-বাসি খাবার দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া একই খাবার বারবার রান্না করে শিক্ষার্থীদের সামনে পরিবেশন করা হচ্ছে। এক বেলার বেচে যাওয়া খাবার পরে খাওয়ার সময় আরেকবার গরম করে দেওয়া হচ্ছে। এতে করে খাবারের গুণাগুণ নষ্ট হচ্ছে এবং শিক্ষার্থীরা খাবার খেতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এর ফলে তারা বিভিন্ন সময় অভুক্ত থাকছে।
গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, আমরা যেসব সময়ে খাবার গ্রহণ করি, সে সময় পাকস্থলীর দেয়াল থেকে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসরিত হয়। আর এই নিঃসরিত অ্যাসিডটি খাবার পরিপাকে সহায়তা করে। আমরা যদি হঠাৎ খাওয়ার সময় পরিবর্তন করে ফেলি কিংবা সে সময় না খাই, তাহলে কিন্তু পাকস্থলী থেকে সে সময়েও হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড নিঃসরিত হবে। কারণ, মস্তিষ্কে রুটিন করা আগের সময় অনুযায়ী অ্যাসিড ক্ষরিত হবে। এর ফলে অ্যাসিড পাকস্থলীতে কোনো খাবার না পেয়ে প্রদাহ সৃষ্টি করবে। যার ফলে সৃষ্টি হয় গ্যাস্ট্রিক বা আলসার, যা শরীরে নানা সমস্যার তৈরি। এখন আসি সকালে না খেলে কী হয়। সকালে যদি খাবার গ্রহণ করা না হয়, তাহলে গ্যাস্ট্রিক বা আলসারের সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এ ছাড়া সকালে না খেলে বুদ্ধি ও স্মৃতিশক্তি কমে যায়, হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়, অর্থাৎ হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়ে, কাজ করার শক্তি কমে যায়, ওজন বাড়ে এবং ডায়াবেটিসের আশঙ্কা বাড়ে। দেখা গেছে, যেসব লোক সকালের খাবার খায় না, তাদের হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ২৭ শতাংশের বেশি থাকে।

হল কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন থাকতে হবে। কারণ, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে হলে পর্যাপ্ত পুষ্টিসম্পন্ন খাবারের সরবরাহ বাড়াতে হবে। এতে করে শিক্ষার্থীরাও সকালের খাবারে আগ্রহ পাবে। বিশেষ করে হলগুলোতে রুটি, কলা, ডিম, দুধসহ নানা পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এতে করে খাওয়ার প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বেড়ে যাবে।

যাহোক, আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর এ বাস্তবতায় এত সহজে পরিবর্তন আসবে বলে মনে হয় না। তবে দ্রুত এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে হবে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। তারপরও হলের শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে নিজেকে। বিশেষ করে সব শিক্ষার্থীর খাওয়ার প্রতি অনীহা না করে, বিশেষ করে সকালের খাবার নিয়মিত খেয়ে দিনটা শুরু করবে—এ প্রত্যাশাই থাকল।

আবু হাসনাত তুহিন
শিক্ষার্থী, আইন ও ভূমি প্রশাসন
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়