বন্যা, খরা, ভূমিকম্পের মতো বাংলাদেশের আরেকটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে ঝড়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে বরফঝড়, তুষারঝড়, ধুলোঝড় ইত্যাদি দেখা গেলেও বাংলাদেশে সাধারণত ঘূর্ণিঝড় ও কালবৈশাখী দেখা যায়।
কালবৈশাখী উত্তর দিক থেকে প্রবাহিত হয় বলে ইংরেজিতে একে নরওয়েস্টার বলা হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে এ ঝড় দেখা যায়। বাংলাদেশ এবং উত্তর–পূর্ব ভারতে মার্চ থেকে কালবৈশাখী শুরু হয়। গ্রীষ্ম ঋতুর সঙ্গে হাত ধরাধরি করে এ ঝড়ের আগমন ঘটে। বাংলাদেশে বৈশাখ মাসে কালবৈশাখীর মাত্রা ব্যাপক আকার ধারণ করে। সাধারণত কালবৈশাখীর বায়ুর গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৬০ কিলোমিটার। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ গতিবেগ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশিও হতে পারে।
বাংলাদেশের কালবৈশাখী সাধারণ বৈশাখ মাসে বেশি হয় । সাধারণ এ ঝড়ের অনেক আগাম পূর্বাভাস বলা খুব কঠিন। খুব অল্প সময়েই সংঘটিত হয়ে থাকে। আগাম পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব হয় না বলে এ ঝড়ের ক্ষতির মাত্রা বেশি থাকে। কালবৈশাখীর কারণে সব পেশার মানুষই কমবেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন। সব থেকে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন কর্মজীবী, কৃষক ও জেলে শ্রেণির মানুষ। কালবৈশাখীর বেগ প্রবল থাকে বলে ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়।
কালবৈশাখীর কারণে শুধু ফসলের নয়, মানুষের জানমালেরও ক্ষতি হয়। যখন ঝড় ১০০ কিলোমিটার বেগে ধেয়ে আসে, তাকে আমরা বিধ্বংসী বলে থাকি। কারণ, এ ঝড়ের সামনে কোনো কিছু ঠিক থাকে না। তখন ঘরবাড়ির প্রচুর ক্ষতি হয়। কোনো কোনো সময় ঘর ভেঙে পড়ে। গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে। তখন ঘরের মধ্যে থাকা মানুষজনও হতাহত হয়। গবাদিপশুও মারা যায়। মাঝেমধ্যে কালবৈশাখীর সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হয়ে থাকে। এতে ফসলের বেশি ক্ষতি হয়। কালবৈশাখীর সময় বজ্রপাতের ঘটনাও ঘটে। বজ্রপাতের কারণে প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যান।
তাই যদি কিছু জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তাহলে কালবৈশাখীর ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব।
গুজব এড়িয়ে চলা। যতটা সম্ভব ধৈর্য ধারণ করা ও আতঙ্কিত না হওয়া।
গুরুত্বপূর্ণ যেসব বৈদ্যুতিক যন্ত্র আছে, সেগুলো চার্জ করে রাখা।
যেখানে বসবাস করছেন, সেখানে যদি বিদ্যুৎ না থাকে, তাহলে মোমবাতি বা কেরোসিন তেল সংগ্রহ করে রাখা ।
আবহাওয়া বার্তা শুনে চলাফেরা করা। আবহাওয়া বার্তা যদি কোনো সতর্কতা মেনে চলতে বলে তাহলে নিয়মকানুন অনুসরণ করা।
গুরুত্বপূর্ণ যেসব কাগজ, যেমন পরীক্ষার সার্টিফিকেট, নম্বরপত্র, গুরুত্বপূর্ণ বই, দলিলপত্র ইত্যাদি নিরাপদে রাখা বা পলিব্যাগের ভেতর মুড়িয়ে রাখা।
নিরাপত্তার জন্য ফার্স্টএইড বক্স ঠিক আছে কি না, দেখে কিংবা গুছিয়ে রাখা ।
অনিরাপদ বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা। ধারালো ভাঙা জিনিস সরিয়ে রাখা, যাতে আঘাত না পান।
পানি ফুটিয়ে রাখা এবং শুকনা খাবার সংরক্ষণ করা। ঝড় যদি দীর্ঘমেয়াদি হয়, সেসময় সেগুলো কাজে দেবে।
গবাদিপশু ও হাঁস–মুরগি নিরাপদ স্থানে রাখা, যাতে ঝড়ে তাদের কোনো ক্ষতি না হয়।
বাড়ির ওপর যদি এমন কোনো গাছ থাকে, যেগুলো দেখলে মনে হয় ভেঙে পড়তে পাড়ে, সেগুলো আগে থেকেই কেটে ফেলা।
ঝড়ের সময় বাড়ি থেকে না বের হওয়াই ভালো। যদি বের হতেই হয়, তাহলে সঙ্গে ছাতা রাখা ভালো।
বজ্রপাতের সময় ঘর থেকে বের হওয়া যাবে না । বজ্রপাতে সময় যদি ঘর বা অন্যান্য জায়গায় অবস্থান করতে না পারেন তাহলে, কোনো বড় গাছের নিচে অথবা ছায়ায় অবস্থান করতে হবে।
মো. সোহান হোসেন
শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া