উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেশনজটের শেষ কোথায়?

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বা সংক্ষেপে বাউবি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। এটি দেশের একমাত্র দূরশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান। বিদ্যার্থী তালিকাভুক্তি অনুসারে এটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়।

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ কর্তৃক প্রণীত আইন অনুযায়ী দেশের সর্বস্তরের শিক্ষাকে দূরশিক্ষণ পদ্ধতির মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ১৯৯২ সালের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্ম। এর মূল ক্যাম্পাস ঢাকা শহরের পাশে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে অবস্থিত। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অন ক্যাম্পাস (ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্র, ঢাকা) এবং আউটার ক্যাম্পাস (স্টাডি সেন্টারসমূহ)—দুই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রচলিত আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৭টি একাডেমিক অনুষদ বা স্কুল এবং ১১টি প্রশাসনিক বিভাগ রয়েছে। সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও ভাষা স্কুল একাডেমিক অনুষদের মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য অনুষদ।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান, মানবিক ও ভাষা স্কুল পরিচালিত চার বছর মেয়াদি আইন অনার্স প্রোগ্রামে দুটি ব্যাচ রয়েছে। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের জন্য (রবি-বুধ) এবং যেকোনো বয়সের শিক্ষার্থীদের জন্য রয়েছে (শুক্র-শনি) ব্যাচ। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রোগ্রামে চলছে তীব্র সেশনজট।

সেমিস্টার ক্লাস নির্ধারিত সময়ে শেষ করার পরও সময়মতো পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা না করা, ফলাফল প্রকাশ করতে বিলম্ব প্রভৃতি সমস্যা রয়েছে।

পরীক্ষার ফলাফল সময়মতো প্রকাশ করার জন্য বারবার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না।

সেশনজট নিরসন, সময়মতো পরীক্ষা এবং ফলাফল ঘোষণার জন্য কিছুদিন আগে ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্র ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করলেও অদ্যাবধি এই বাজে অবস্থার কোনো উত্তরণ ঘটেনি। এমনকি প্রতি সেমিস্টারের পাঁচটি কোর্স পরীক্ষা নিতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে। তা ছাড়া দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় বাউবি আইন প্রোগ্রামের সেমিস্টার ফি প্রায় কয়েক গুণ বেশি এবং বার্ষিক ৫ শতাংশ হারে চক্রবৃদ্ধি সুদ নেওয়া হয়। বর্তমানে বাউবিতে আইন প্রোগ্রামে অনার্স করতে ৮ সেমিস্টারে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা লাগে, যা মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য এই খরচ বহন করা খুবই কষ্টদায়ক। সেমিস্টার ফি কমানো এবং ৫ শতাংশ হারে চক্রবৃদ্ধি সুদ কমানোর জন্য শিক্ষার্থীরা অনেকবার দাবি জানালেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ ক্ষেত্রে শুভবুদ্ধির উদয় হয়নি।

মাঝেমধ্যে আশাহত হয়ে নিজেদের কাছেই প্রশ্ন জাগে, কী হবে দেশের অন্যতম একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ে, যখন নিজেরাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম, দুর্নীতি ও ব্যাপক বৈষম্যের শিকার হচ্ছি!
এমন অবস্থায় আইন প্রোগ্রামের সব শিক্ষার্থী নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুবই হতাশার মধ্যে আছেন।

স্নাতক শেষ করতে দেরি হওয়ায় বিজেএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া একই সেশনের শিক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের তুলনায় বার কাউন্সিল পরীক্ষায় অংশগ্রহণে পিছিয়ে পড়ছেন। অন্যান্য সরকারি চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে সুযোগ কমে আসছে।

পুরোপুরিভাবে বাউবি প্রশাসন চলছে নাজুক, হ-য-ব-র-ল অবস্থায়। শিক্ষার্থীদের প্রতি বাউবি প্রশাসনের কোনো দরদ নেই। নেই কোনো ন্যূনতম দায়বদ্ধতা। তারা শুধু নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত, নতুন নতুন কোর্স চালু করতে ব্যস্ত। পুরোপুরি শিক্ষাকে তারা একটা ব্যবসায় পরিণত করে ফেলেছে।

এমন অবস্থায় আমরা আইন প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সেশনজট নিরসন, সময়মতো পরীক্ষার রুটিন ঘোষণা, ফলাফল প্রকাশ প্রভৃতি ক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। আর জোর দাবি জানাই স্বতন্ত্র ‘আইন অনুষদ’ আইন প্রোগ্রামের সব সমস্যার দ্রুত সমাধান ঘটবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
শিক্ষার্থী, আইন প্রোগ্রাম
বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়