পোশাকশ্রমিকদের দাবি মেনে নিন

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের কৌশল হলো কম মূল্যে বিশ্ববাজারে উন্নত মানের পোশাক সরবরাহ করা। সস্তায় শ্রমিক পাওয়া যায় বলেই এটি সম্ভব হয়। তৈরি পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান একক দেশ হিসেবে দ্বিতীয় এবং ডব্লিউটিও'র বর্তমান হিসেবে মোট পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের দখলে ৬.৪ শতাংশ হিস্যা। বাংলাদেশে ইপিজেড রয়েছে মোট ৮টি এবং কারখানা রয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজারের ও বেশি।

শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সম্প্রতি বলেছে, পোশাকশিল্পে প্রায় ২১ লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন। বাংলাদেশের মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশ আসে পোশাক শিল্প খাত থেকে। আমাদের দেশে এটিই সবচেয়ে ব্যবসাসফল শিল্প খাত। কিন্তু অতি আক্ষেপের বিষয় হলো এই খাতের শ্রমিকরাই সবচেয়ে অবহেলিত বারবার আন্দোলন করতে হয় তাদের ন্যূনতম বেতনের জন্য।

বাংলাদেশের যেসব এলাকায় গার্মেন্টস রয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ এবং চট্টগ্রামে। আমরা জানি যে, তৈরি পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকদের অবদান সবচেয়ে বেশি কিন্তু বর্তমানে নারী শ্রমিকদের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। ২০১৭ সালে ৩৫০০টি কারখানার উপর পরিচালিত ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর অন্টারপ্রেনারশিপ ডেভেলপমেন্ট বিভাগের একটি গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৫৮% যা পূর্বে ছিল ৮০%।
এককভাবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকলে ও দেশের শ্রমিকদের সম্মান, তাদের বেতন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা অন্যান্য দেশের তুলনায় সবার তলানিতে রয়েছে।

ভিয়েতনামের একজন শ্রমিক বাংলাদেশি শ্রমিকদের চেয়ে দ্বিগুণ বেতন পান। শুধু তাই নয় তারা বেতনের সঙ্গে চিকিৎসা সেবা, সন্তানের জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে। বাংলাদেশের মালিকেরা শ্রমিকদের ১০ হাজার ৪০০ টাকা বেতন দিতে চান যেটি ৯৪ থেকে ৯৫ ডলার পর্যন্ত কিন্তু অন্যদিকে ভিয়েতনামে ন্যূনতম মজুরি ১৭০ ডলার। কম্বোডিয়াতে ২০০ ডলার। ইন্দোনেশিয়াতে ২৪৩ ডলার এবং চীনে সেটি ৩০৩ ডলার পর্যন্ত মজুরি তাদের মালিকেরা দিচ্ছে। একটি সমীক্ষাতে জানা যায় বাংলাদেশে ২০২১-২২ অর্থবছরে শুধুমাত্র তৈরি পোশাক শিল্প থেকে রপ্তানির পরিমাণ  ৪২.৬১৩ বিলিয়ন ডলার। যা মোট রপ্তানির প্রায় ৮১.৮১ ভাগ। অন্যান্য দেশ থেকে বেশি আয় করেও তাদের তুলনায় আমাদের দেশের শ্রমিকেরা নাম মাত্র বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন।

তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকেরা তাদের মানসম্পন্ন জীবন যাপনের জন্য সর্বনিম্ন ২৩ হাজার টাকা মজুরির দাবি উত্থাপন করেছেন।  বর্তমানে আমাদের দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সকল প্রকার দ্রব্যমূল্যের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে মধ্যম ও স্থির আয়ের মানুষের দুর্দশা বেড়েছে। যেটির প্রভার তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের উপর ও পড়েছে। যার ফলে তাদের এই স্বল্প আয় দিয়ে তারা তাদের নিজেদের এবং সন্তানের খাদ্য,শিক্ষা, চিকিৎসা খাতে ব্যয় কমিয়ে দিয়েছে।

একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত এপ্রিল-জুন মাসে মধ্যে ওভারটাইম বাদে শ্রমিকদের মাসিক গড় আয় ছিল ৯ হাজার ৯৮৪ টাকা। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে যেটি খুবই কম এবং এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে চার কিংবা পাঁচজনের একটি পরিবার কখনোই স্বাস্থ্যকর ভাবে জীবন পরিচালনা করা সম্ভব নয়।

অতএব, শ্রমিকদের বর্তমান যেই দাবি সেটি কার্যকর করা হোক।এর ফলে শ্রমিক এবং তাদের পরিবার সুস্থ ও সুন্দর ভাবে জীবন পরিচালনা করতে পারবে। এবং এমন একটি সমঝোতা প্রয়োজন যেটিতে মালিক পক্ষ এবং শ্রমিক উভয় ইতিবাচক অবস্থায় থাকবে। যাতে করে শ্রমিকদের পুনরায় নিজেদের যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্য রাস্তায় নামার প্রয়োজন না হয়। কারণ ভুলে গেল চলব না তারা আমাদের দেশের সম্পদ। এবং তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যতের উপর দেশের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নির্ভর করছে।

মুহাম্মদ সুলতান মাহমুদ
শিক্ষার্থী, ঢাকা কলেজ