আমি বাস করি ঢাকার রূপনগর আবাসিক এলাকায়। এই এলাকায় ওষুধের দোকানের অভাব নেই। অলিতে গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে ওষুধের দোকান। এসব ওষুধের দোকানি, বিক্রেতা বা কর্মচারীরা কত সহজেই যে নিজেরা চিকিৎসক হয়ে উঠেছেন এবং চিকিৎসা করে চলছেন সময়ে-অসময়ে, তা খুচরা কোনো ওষুধের দোকানে কয়েক মিনিট দাঁড়ালেই টের পাওয়া যাবে।
সাধারণ জ্বর, ব্যথা–যন্ত্রণায় কী ধরনের ওষুধ খাওয়া যেতে পারে, তা কমবেশি সবারই জানা। কারও কোনো অসুস্থতা দেখলে দোকানে পাশাপাশি কেউ না কেউ থাকেনই বলার জন্য, ‘অমুক ওষুধটা খাও।’ ওষুধের দোকানের মালিক থেকে কর্মচারী পর্যন্ত এ ব্যাপারে যেন মহাপণ্ডিত। তাঁদের আচার–আচরণ, কথাবার্তায় যেন মনে হয়, চিকিৎসকের চেয়ে তাঁরা যেন কম নন। কখনো আবার ওষুধের নাম জানা না থাকলে কেবল দোকানদারকে উপসর্গ বলতে শোনা যায়, আর দোকানদার তা শুনে বাক্স থেকে ওষুধের পাতা বের করে বলতে থাকেন, ‘এটার সঙ্গে এটা খাবেন, অমুকটা খাওয়ার আগে, অমুকটা পরে।’ ইত্যাদি কত কী বলেন ওষুধের দোকানের মালিক ও কর্মচারীরা।
বিক্রেতা যে ওষুধ দিচ্ছেন, সেটা সেই রোগীর ক্ষেত্রে আদৌ উপযুক্ত কি না, তা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া সম্ভব! এভাবে ওষুধ খেয়ে মূলত ব্যথা–যন্ত্রণা-জ্বর সেরে গেলেই রোগী বা তাঁর স্বজন ভেবে নেন রোগী সুস্থ, মিটে গেছে সমস্যা। যন্ত্রণা উপশমটাই যেন মূল লক্ষ্য হয়ে দাঁড়ায়।
চিকিৎসক না দেখিয়ে নিজে থেকে ওষুধ খাওয়ার এই প্রবণতা ভয়ংকর রকম বেড়েছে। প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ দেওয়া এর নেপথ্যের কারণ। কিন্তু কীভাবে এই প্রবণতা শুরু হলো, আমরা জানি না। আমরা ভেবে দেখি না, ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া একটা বড় দিক।
বহু বছর আগে, প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হতো ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে। তাতে সময় লাগত বটে, কিন্তু উপশম হতো, নিরাময়ও হতো। এখন আর সেই সময় ও ধৈর্য লক্ষ করা যায় না। সবাই মুড়ি-মুড়কির মতো ওষুধ–ট্যাবলেটে মজেছেন। অবাক লাগে, সবাই যেন নিজেই নিজের চিকিৎসক। অবশেষে প্রশ্ন জাগে, ওষুধের দোকানদার বা তাঁর কর্মচারীরা কি চিকিৎসক?
লিয়াকত হোসেন
রূপনগর, ঢাকা